বিএনএ, ডেস্ক : ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই নওমুসলিম ছাত্রী ত্বহিরা তাসনীম আয়াত বিয়ে করেছেন।ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার আগে তার নাম ছিল সুপ্রীতি দত্ত তমা। তিনি আলমডাঙ্গা শহরের ক্যানেলপাড়ার স্বর্গীয় শ্যামল দত্তের মেয়ে ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি অনুষদের শিক্ষার্থী (মাস্টার্স)।
গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে ইসলাম গ্রহণ করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আদালতে স্বাক্ষরকৃত হলফনামা পোস্ট দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই শিক্ষার্থী। ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি মুসাব তৌহিদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক যুবককে বিয়ে করেছেন। মুসাব তৌহিদ আলমডাঙ্গার অত্যন্ত পরিচিত মুখ।
এদিকে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তাকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন মা বন্ধনা দত্ত। গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে তিনি তার মেয়েকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন।
তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেন, ‘এখন থেকে তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। সে তার পিতা-মাতা হিসেবে আমাদের আত্মীয়-স্বজনকে পরিচয় দিতে পারবে না। আমার পরিবার বা তার প্রতিপালনকারী মামা এবং আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনের সাথে তার সম্পর্ক থাকবে না। আমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে এবং তার কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য আমি, আমার ভাই-বোন ও আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন দায়ী থাকবে না।
তমা দত্তের মা বন্ধনা দত্ত জানান, ‘আমি এক হতভাগ্য বিধবা নারী। আমার প্রথম স্বামী স্ট্রোক করে মারা যায়, যখন আমার একমাত্র মেয়ে সুপ্রীতি দত্ত তমার বয়স মাত্র দুই বছর। মেয়ের ইচ্ছা অনুযায়ী মেয়ের বাবার অভাব পূরণ করতে দ্বিতীয় বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। মেয়ের কথা ভেবে দ্বিতীয় বার সন্তান নেয়ার কথা ভাবিনি কখনো। এক মেয়ে এবং স্বামী নিয়ে খুব সুখের সংসার ছিল আমার। কিন্তু সুখ আমার কপালে বেশিদিন সইলো না। দ্বিতীয় স্বামীও ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন। আমার ভাইদের সাহায্যে ভারতের ভেলোরে সিএসি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা করাই। কিন্তু আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারিনি।’
বন্ধনা দত্ত আরো জানান, দু’বার স্বামী হারিয়ে বেঁচে থাকার আশা হয়ত ছেড়েই দিতাম, যদি না আমার মেয়েটা থাকত। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নতুন করে আবার বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। কিন্তু হঠাৎ করে তমা আমাকে কল দিয়ে জানায় সে মুসাফ নামের একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। পরদিন ফেসবুকে দেখতে পাই আমার মেয়ে ধর্মান্তরিত হয়েছে এবং এই সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। আমি একটা বিরাট ধাক্কা খাই। আমার মেয়ে ছিল আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। সেই অবলম্বন আজকে আর আমার নেই। সারা দেশবাসীর কাছে আমার প্রশ্ন আমি কি আমার মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে ভুল করেছি? আমার মেয়েকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আমি কি ভুল করেছি? আমার ভাই-বোনদের সম্মতিতে সুস্থ মস্তিষ্কে আজ থেকে আমার মেয়ের পরিচয় আমি মুছে দিলাম। আমি আদালতসহ সারা দুনিয়ার সামনে সুপ্রীতি দত্ত তমাকে ত্যাজ্য কন্যা ঘোষণা করলাম।’
এলাকাসূত্রে জানা যায়, তমা ও মুসাবের দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এত দিনের প্রেমের সফল পরিণতি এই বিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, ইতোপূর্বে একাধিকবার তমা পরিবার ছেড়ে মুসাবের কাছে এসেছিলেন। সে সময় মুসাবের পরিবার তমাকে বুঝিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠান। গতকাল দিনভর মুসাবকে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বন্ধ ছিল হ্যামলেট ক্যাফে।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখনো কোনো অভিযোগ করা হয় নাই।
জানা যায়, ১৯ অক্টোবর ঝিনাইদহের সিনিয়র জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট রোমানা আফরোজের আদালতে হলফনামায় স্বাক্ষর করে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেন ওই ছাত্রী। একইসাথে তার পূর্বের নাম (সুপ্রীতি দত্ত তমা) পরিবর্তন করে ত্বহিরা তাসনীম আয়াত নাম গ্রহণ করেন।
হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন, ’আমি পূর্ণ বয়স্ক সাবালিকা, নিজের ভালোমন্দ বিচার বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো বিদ্যা ও বুদ্ধি আমার হইয়াছে। সে কারণে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ আমার প্রতিবেশি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম সহপাঠী বন্ধু বান্ধবীদের সহিত মেলামেশা করিয়া এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে ওয়াজ শুনিয়া ইসলাম ধর্মের প্রতি আমার ভালবাসার সৃষ্টি হয়। ফলে আমি ইসলামী বিভিন্ন পুস্তকাদি পাঠ করিয়া তৌহিদ, রিসালাত ও কিয়ামত সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করিয়া ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যাহা দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও নাজাত দিতে পারে বলিয়া বিশ্বাস করি। ফলে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সে মোতাবেক আমি একজন আলেমের নিকট উপস্থিত হইয়া আল্লাহকে হাজির নাজি জানিয়া মুখে পাক কলেমা শরীফ উচ্চারণ করিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়াছি।’
ফেসবুক পোস্টে নওমুসলিম ত্বহিরা তাসনীম আয়াত উল্লেখ করেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। আট বছর ধরে চেষ্টা করে অবশেষে আমি এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে একজন মুসলমান। আল্লাহ আমাকে সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করেন। আমিন। আমার জন্য দোয়া করবেন।’