26 C
আবহাওয়া
৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৪ (সিলেট-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৪ (সিলেট-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল:সংসদীয় আসন-২৩৪ (সিলেট-৬)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সিলেট-৬ আসনের হালচাল।

YouTube player

সিলেট-৬ আসন 

সিলেট-৬ সংসদীয় আসনটি বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২৩৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির শরফ উদ্দীন খসরু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ শত ১০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৮ শত ৭৮ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শরফ উদ্দীন খসরু বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৩ শত ২২ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির শরফ উদ্দীন খসরু কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির শরফ উদ্দীন খসরু কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৩ হাজার ৮ শত ৩১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ৯ শত ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির মোজাম্মেল আলী । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৬ শত ৯১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মকবুল হোসাইন প্রকাশ লিচু মিয়া বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫ শত ৮৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭ শত ৮৪ জন। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মকবুল হোসাইন প্রকাশ লিচু মিয়া বিজয়ী হন। ঘড়ি প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৫ শত ১৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৫ শত ১৭ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭ শত ৬ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬ শত ৩৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬ শত ৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াত ইসলামীর মাওলানা হাবিবুর রহমান । দাড়িপাল্লা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৫ শত ৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন 

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১ শত ১৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৯ হাজার ৫ শত ৫৫ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ফয়সল আহমেদ চৌধুরী, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আজমল হোসেন, এবং কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের শমসের এম চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম নাহিদ বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৬ হাজার ১৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফয়সল আহমেদ চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৮৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে জাতীয় পার্টি , ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং অষ্টম সংসদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সিলেট-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেট-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৮.৩০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬.৪৮%, বিএনপি ৮.২৭%, জাতীয় পাটি ৩১.০৩%, জামায়াত ইসলামী ১২.১৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২২.০৯% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.৯৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৪৯%, বিএনপি ২১.০২% জাতীয় পাটি ২২.৮১%, জামায়াত ইসলামী ৯.৩১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৩৭% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৬৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৮.০৮%, ৪ দলীয় জোট ০.৩২%, জাতীয় পাটি ১৪.৬৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৬.৯৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৬.৭৮%, ৪ দলীয় জোট ২১.২৫% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২১.৯৭% ভোট পায়।

সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন একাদশ জাতীয় সংসদের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরী। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলটির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব সেলিম উদ্দিন।

এই আসনের নতুন চমক নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিলেট-৬ (বিয়ানী বাজার – গোলাপগঞ্জ) আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। আসনটির অধিকাংশ বাড়িতেই আছেন লন্ডন প্রবাসী। অনেকের কাছে এটা লন্ডনীদের আসন বলে পরিচিত।
মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর গঠন করা বাকশালে যোগ না দিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে এনামুল হক চৌধুরী বীর বিক্রম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে ফের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আসনটি জাতীয় পার্টির কব্জায় চলে যায়। ১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে সিপিবি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বর্তমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের দলীয় অবস্থান প্রায় সমান হলেও এই আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৎ ও বাম আদর্শের রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে তিনি এলাকায় কম যান এমন অভিযোগ রয়েছে। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও আছে বেশ দূরত্ব।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা সু সংগঠিত নয়। তা ছাড়া তৃণমুল বিএনপি নতুন ভাবে আত্ম প্রকাশ করেছে। দলটির চেয়ারম্যান হন বিএনপির সাবেক ভাইচ চেয়ারম্যান সমশের মুবিন চৌধুরী। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনা অফিসার কুটনৈতিক সমশের মুবিন চৌধুরীর ক্লিন ইমেজ ও ভাবমূর্তি রয়েছে। তিনি এই আসন থেকে সোনালী আঁশ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। সেই দিক থেকে বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। তবুও বিএনপির ভরসা জামায়াত ইসলামীর ভোট ব্যাংক।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২৩৪তম সংসদীয় আসন (সিলেট-৬) আসনটিতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও তৃণমূল বিএনপির মধ্যে ত্রি-মূখী লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ/এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ