28 C
আবহাওয়া
৪:১৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৮

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৮

কারাগারের রোজনামচা

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল। এ সময়ে বঙ্গবন্ধু কারাগারে বন্দি ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক অসংখ্যবার কারাগারে বন্দি রেখে বাঙ্গালী জাতিকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা করেন। ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপনের পর শুধু প্রথম তিন মাসে বঙ্গবন্ধুকে মোট আটবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো।কারাগারে নিজের, কারাগারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও অন্য বন্দিদের সুখ, দুঃখ, কারাগারে বিভিন্নভাবে নির্যাতন বিভিন্ন সময়ে খাতায় লিপিবদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এর নাম দিয়েছিলেন ‘থালাবাটি কম্বল / জেলখানার সম্বল’।

‘কারাগারের রোজনামচা’

বঙ্গবন্ধুর কারাগারে লেখা খাতাগুলো খুঁজে পান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা পরে ২০১৭ সালের ১৭ই মার্চ বই আকারে প্রকাশ করা হয় ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামে । বইটির ভূমিকা লিখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা এবং নামকরণ করেছেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা।

এই বইয়ে শুধু কারাগারের চিত্রই নয়, ফুটে উঠেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পাকিস্তান সরকারের এক নায়কোচিত মনোভাব ও অত্যাচার-নির্যাতনের নানান চিত্র। ফুটে উঠেছে, দেশ ও মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাবনা, রাজনৈতিক দর্শন,ত্যাগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের অজানা কাহিনী বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি (বিএনএ) ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’ প্রকাশ করছে।

আজ প্রকাশিত হলো- পর্ব-৩৮

জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ৫/৬ বৎসর খেটেছে। মাথা একটু খারাপ আছে । প্রথমে ফাঁসির হুকুম হয়েছিল, পরে বিশ বৎসর সাজা দেওয়া হয়েছে । বাবা ছোটকালে মারা গেছে। মা জেলে আসবার পরে মারা গেছে। দিনভর নামাজ পড়ে, আর সকলকে দোয়া করে। সকলেই ওকে ক্ষেপায়, কিন্তু ও ক্ষেপে না, আস্তে আস্তে কথাগুলি বলে । সাজা কত খেটেছে সেটা ঠিক মতো উঠায় নাই সময় পেলেই আমার কাছে আসে, আর ঐ এক কথা । পরে বুঝলাম অন্যান্য কয়েদিরা ওকে ফুসলায়, ‘সাহেবকে ধর, ভাল করে ধর, খালাস হয়ে যাবি।’ শুধু কি কয়েদিরা, সিপাই, জমাদারও ওকে বলে, যাও শীঘ্র ঐ সাহেবের (আমার) কাছে, কাজ হয়ে যাবে । আর যায় কোথায়! এসে হাজির! ওকে আর বুঝাইয়া লাভ নাই কারণ ও বুঝবে না ।

আজ বাবুর্চিকে বললাম, “আমিই পাকাব, তুমি সব ব্যবস্থা করে আমাকে ডাক দিও।” পড়তে বসলাম । মাঝে মাঝে বৃষ্টি হতেছে । ঘরেই থাকতে হবে । বাইরে যাওয়ার উপায়ও নাই। রোজই কিছু কিছু লোক ধরে আনছে । ঢাকা শহরের বাসিন্দাই বেশি— হরতাল বানচাল করার জন্য

৯টার সময় বাবুর্চি এল আমাকে ডাকতে। গেলাম পাকের ঘরে, বসলাম চেয়ার নিয়ে । যদিও বাইরে কোনোদিন পাক করার সময় আমি পাই না। আর প্রয়োজনও কোনোদিন হয় নাই। তবু জেলে এসে যখন একা থাকতাম তখন পাক করতাম । সময় তো কাটানো যায়। ডাল আগেই পাকাইয়াছে । পটল ভাজি করলাম ইলিশ মাছ পাক করলাম । নিজেই পাক করেছি, সে জন্য মন্দ লাগল না ।

খবরের কাগজ এসে গেল—দেখে আমি শিহরিয়া উঠলাম, এদেশ থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ চিরদিনের জন্য এরা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে! জাতীয় পরিষদে, “সরকারী গোপন তথ্য আইন সংশোধনী বিল আনা হয়েছে। কেউ সমালোচনামূলক যে কোনো কথা বলুন না কেন মামলা দায়ের হবে । ডিপিআর তো আছেই, সিকিউরিটি অব পাকিস্তান আইন তো আছেই । এ ছাড়া ১২৪ ধারাও আছে

বক্তৃতা করার জন্য, ১২৪ ধারা ৭(৩) (ইস্ট পাকিস্তান স্পেশাল পাওয়ার অর্ডিন্যান্স) এবং ডি পি আর রুল দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মোটমাট পাঁচটি মামলা আর অন্যান্য আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

প্রফেসর ইউসুফ আলী ভাল বক্তৃতাই করেছেন । বক্তৃতা করলে কি হবে, কে কার কথা শোনে! সরকারের পক্ষ থেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় ডিপিআর দিয়ে অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে । তাসখন্দে শান্তি চুক্তি করে এসে আরও অনেক রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করেছে। নিশ্চয়ই এই আইনও তারা ব্যবহার করবে বিরুদ্ধ দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে । এ দেশকে তারা কোথায় নিতে চায় বুঝতে আর বাকি নাই । যে কোনো বক্তৃতা বা বিবৃতিকে সরকার অপব্যাখ্যা করে মামলা দায়ের করতে পারে ।

সূত্র: কারাগারের রোজনামচা, পৃষ্ঠা ৬১-৬২, লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান, প্রকাশকালঃ ফাল্গুন ১৪২৩/ মার্চ ২০১৭

পড়ুন আগের পর্ব :

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৫

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৪

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩৩

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩২

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩১

কারাগারের রোজনামচা : পর্ব-৩০

গ্রন্থনা ও পরিকল্পনাঃ ইয়াসীন হীরা, সম্পাদনাঃ হাসিনা আখতার মুন্নী,এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ