বিএনএ ডেস্ক: সারের দাম বাড়াতে যারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সারের বাজার অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা করছে তাদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রয়োজনে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়।
রোববার (২১ আগস্ট) বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠক থেকে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে ভার্চুয়ালি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের যুক্ত করা হয়।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক জানান, অনেক সময় সারের ট্রাক ডিলারদের কাছে পৌঁছতে এক বা দুদিন দেরি হলেই এই সুযোগে হঠাৎ মূল্য বাড়িয়ে কৃষকদের দুর্ভোগে ফেলা হয়। এই দুর্ভোগ রোধে কঠোর মনিটরিং করা হচ্ছে। সার নিয়ে কারসাজি বন্ধে জেলা প্রশাসককে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের মূল্য বাড়ছে। এই আওয়াজেও কেউ কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। তবে গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। আগামী বোরোর জন্য জানুয়ারিতে যদি সার আমদানি করে আনতে না পারি তাহলে সংকট হতে পারে। কিন্তু জানুয়ারি পর্যন্ত কোনো সমস্যা নেই। জানান, কেউ সারের বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে কিনা সেটি চিহ্নিত করার কাজ চলছে। কেউ শনাক্ত হলে তার ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।
সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা, বিএডিসির চেয়ারম্যান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সারা দেশের জেলা-উপজেলাসহ মাঠ পর্যায়ের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সংযুক্ত ছিলেন। সভায় প্রতিটি জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকরা সারের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
কেউ কেউ গুজব ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংকট তৈরি করছে কিনা সে ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তাদের বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করার আহ্বান জানান কৃষি সচিব।
সভা থেকে বলা হয়, রসিদ ছাড়া যেন সার বিক্রি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতার দোকানে লালসালুতে বা ডিজিটালি সারের মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখতে হবে। ডিলারের গুদাম ভিজিট করে সারের অ্যারাইভাল নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় জানানো হয়, ২১ আগস্ট পর্যন্ত ইউরিয়া সারের মজুত ৬ লাখ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন, টিএসপি ৩ লাখ ৯৪ হাজার টন, ডিএপি ৭ লাখ ৩৬ হাজার টন, এমওপি ২ লাখ ৭৩ হাজার টন। সারের বর্তমান মজুতের বিপরীতে আমন মৌসুমে (আগস্ট থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত) সারের চাহিদা হলো ইউরিয়া ৬ লাখ ১৯ হাজার টন, টিএসপি ১ লাখ ১৯ হাজার টন, ডিএপি ২ লাখ ২৫ হাজার টন, এমওপি ১ লাখ ৩৭ হাজার টন।
গত বছর এই সময়ে ইউরিয়া সারের মজুত ছিল ৬ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন, টিএসপি ২ লাখ ২৭ হাজার টন, ডিএপি ৫ লাখ ৫৬ হাজার টন এবং এমওপি ১ লাখ ৯৬ হাজার টন।
এদিকে চলতি আমন মৌসুমে তীব্র সার সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। দেশের উত্তরাঞ্চলে মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার যেন সোনার হরিণ। নওগাঁর মহাদেবপুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাহিদামতো সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। সময়মতো জমিতে সার দিতে না পারায় গাঢ় সবুজ বর্ণ ধান গাছ লালচে হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কৃষকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বগুড়ার শেরপুরে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দিলেই মিলছে সার। বস্তাপ্রতি সারে ৩০০-৪০০ টাকা বাড়তি নেয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, নানা অজুহাতে হঠাৎ করেই খোলাবাজারে সার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন ডিলাররা।
বিএনএ/এ আর