বিএনএ ঢাকা: মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা চলচ্চিত্র নায়িকা পরীমনির মুক্তি দাবি করেছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। বারবার তাকে রিমাণ্ডে নিয়ে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
রোববার (২২ আগস্ট) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘পরীমনির জন্য ন্যায়বিচার চাই’ শিরোনামে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সাদেকা হালিমসহ দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিক।
সমাবেশে তত্ত্বাবধায়ক সুলতানা কামাল বলেন, একজন মানুষ যিনি একটা অপরাধের শিকার হয়ে একসময় মামলা করেছেন সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে নানাভাবে প্রশ্ন করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত তাকে হেনস্থা করার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজের হাতেই তুলে নিয়েছে। একটি স্বাধীন দেশে একজন মানুষের সুবিচারের জন্য আজকে মানববন্ধন বা সমাবেশ করতে হচ্ছে, এর থেকে বিব্রতকর, লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনা কোনো সমাজে বোধ হয় আর হতে পারে না। অত্যন্ত অল্প বয়সী পেশাজীবী একজন নারীকে, যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা সংগত হয়নি।
তিনি বলেন, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নারীবিদ্বেষ ঢুকে গেছে। বিনোদনশিল্পের কোনো নারীর বিরুদ্ধে বলার সুযোগটা তারা হাতছাড়া করে না। সে কারণেই বিচার শুরু হওয়ার আগেই পরীমনিকে অভিযুক্তের মতো কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে প্রতিনিয়ত তার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করা হচ্ছে, নিকৃষ্ট কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এসবের সুযোগ করে দেয়ার দায়দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল।
এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘পরীমনির জামিনের আবেদনটি অত্যন্ত অন্যায়ভাবে শোনা হচ্ছে না। তার আইনজীবীকে জামিনের আবেদন করতে দেয়া হয়নি। আইনজীবীকে পরীমনির সঙ্গে কথা বলতে দেয়া হচ্ছেনা। এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কোনো আদালত এটি করতে পারেন না। পরীমনির বিরুদ্ধে বিচার পরিচালনা করতে হলে তা আইন অনুযায়ী করতে হবে। অন্যথায় প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবেন বলে জানান তিনি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, অতি সম্প্রতি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পরীমনিকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে যেটি শুরু হয়েছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোনো সিদ্ধান্তের আগেই তাকে অপরাধী হিসেবে চিত্রিত করা হচ্ছে। পরীমনি অপরাধ করেছেন কি করেননি, সেই সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। আদালতের রায়ের আগে পরীমনিকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা এবং তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অস্বস্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য দেয়া—এসব কোনো সভ্য সমাজের পরিচয় হতে পারে না।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, পরীমনিকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, দেশের একজন নাগরিকের সঙ্গে এমন আচরণ করা যায় না। তাকে তিনবার রিমাণ্ডে নেয়া হলেও জামিন দেয়া হয়নি। এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। যে নাটক মানুষকে গেলানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা যে বানোয়াট, সেটি সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অবিলম্বে পরীমনির মুক্তি দাবি করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন সাদেকা হালিম বলেন, পরীমনিকে তিনবার রিমাণ্ডে নেয়া হয়েছে এবং মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরীমনি চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। তার প্রতি যে ধরনের ব্যবহার করা হচ্ছে, তার যৌক্তিকতা এখনও পরিষ্কার নয় বলে মনে করেন তিনি।
সমাবেশে উপস্থিত থেকে রাশিদ পলাশ বলেন, এই সময় পরীমনির শুটিংয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কারাগারে আছেন। মানুষ ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, তাকে বার বার রিমাণ্ডে এনে মানসিকভাবে অসুস্থ করা হচ্ছে। এতে তার শিল্পী সত্তা নষ্ট হতে পারে। পরীমনি কবে মুক্তি পাবে সেটি নিশ্চিত নয়। আদৌও তিনি শুটিংয়ে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। অবিলম্বে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান রাশিদ পলাশ।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ওই নাগরিক সমাবেশে নির্মাতা, শিল্পী, শিক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীরা অংশ নেন। শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশক রবিন আহসান ও অ্যাকটিভিস্ট আকরামুল হকের উদ্যোগে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিকজন’ ব্যানারে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনএনিউজ/আরকেসি