20 C
আবহাওয়া
২:১২ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রাবি: আবাসিক হলে “পলিটিক্যাল ব্লক”, নীরবে চলছে সিট বাণিজ্য

রাবি: আবাসিক হলে “পলিটিক্যাল ব্লক”, নীরবে চলছে সিট বাণিজ্য


বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছাত্রদের জন্য আবাসিক হল রয়েছে ১১টি। হলগুলোর অভ্যন্তরের এক একটি বিল্ডিং ব্লক নামে পরিচিত। কোনো হলে তিনটি, কোনো হলে আবার রয়েছে চারটি ব্লক। তবে আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে বিশেষ এক ধরণের ব্লক, যার নাম “প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটারি ব্লক” কিংবা “পলিটিক্যাল ব্লক”। কিছু কিছু হলের ব্লকগুলোর বিভিন্ন ফ্লোরে, বড় করে লিখা রয়েছে এসব বিশেষ ব্লকের নাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলেই ছাত্রলীগের কর্মী রাখার নাম করে হলগুলোতে ব্লক দখল করে নীরবে সিট বাণিজ্য করে যাচ্ছে হল শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মী। রাবি ছাত্রলীগের নেতাদের ভাষ্য, সাংগঠনিক কাজকে গতিশীল রাখতে প্রতিটি হলেই ছাত্রলীগের কর্মী প্রয়োজন। ফলে ছাত্রদের ১১টি হলেই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারির নামে রয়েছে আলাদা ব্লক।

তবে “একটি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের নামে আবাসিক হলে আলাদা ব্লক থাকাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত?” — এমন প্রশ্ন অনেকের! কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী রাখার অজুহাতে টাকার বিনিময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হলে তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রাবি ছাত্রলীগের নেতারা। এসব ব্লকে থাকা অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই হল কার্ড নেই বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে।

টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের ব্লকে উঠা কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, হলে তুলে দেওয়ার নাম করে প্রথমে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয় তাদের কাছ থেকে। পরে তাদেরকে কিছুদিন থাকতে হয় “পলিটিক্যাল” এসব ব্লকে। এসব ব্লকে থাকাকালীন ছাত্রলীগের মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করতে তাদেরকে বাধ্য করা হয়। যদিও টাকার বিনিময়ে হলে উঠায় এসব মিটিং মিছিলে যেতে বাধ্য নয় তারা। এক প্রকার চাপে পড়েই যেতে হয় তাদের। কিছুদিন থাকার পর অন্য ব্লকে সিট ফাঁকা হলে তাদেরকে পাঠানো হয় সেখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী জানান, তাদের একনিষ্ঠ অনেক ছাত্রলীগ কর্মী আছে যারা সংগঠনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা হলে সিট পাচ্ছে না। প্রতিটি হলে তাদের ছাত্র সংগঠনের জন্য থাকা ব্লকগুলোতে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে হলে উঠাচ্ছেন। এর ফলে শুধু সাধারণ শিক্ষার্থীরাই নয়, ছাত্রলীগ কর্মীদের মনেও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটির উপর ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি হলের হলের মধ্যে ৫টি হলের দেয়ালে প্রকাশ্যেই ‘প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটারি ব্লক’ লেখা রয়েছে। আর বাকী হলগুলোর দেয়ালে প্রকাশ্যে লেখা না থাকলেও সভাপতি-সেক্রেটারির ব্লক আলাদাভাবে চিহ্নিত করা রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে এগুলো “পলিটিক্যাল ব্লক” নামেই বেশি পরিচিত।

টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের ব্লকে উঠা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাকে হলে তুলে দেওয়ার কথা বলে সাত হাজার টাকা নেয় এক নেতা। আমাকে রুম দেওয়ার কথা বলে ছাত্রলীগের ব্লকে রাখে। প্রতিনিয়ত মিটিং মিছিলে আমাকে জোর করেই নিয়ে যেত তারা। ছয় মাস থাকার পর একটা ফাঁকা সিট পেয়ে আমাকে অন্য জায়গায় শিফট করে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন বলেন, “টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের ব্লকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সিট বিক্রির ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। এটা আমাদের জন্য ও আমাদের সংগঠনের জন্য একটি অশনিসংকেত। ছাত্রলীগের ব্লক থাকা সত্ত্বেও আমাদের কর্মীরা হলের সিটে উঠতে পারছে না। এমন কর্মকান্ডে আমাদের সংগঠনও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।”

শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দ্বিতীয় ব্লকের তৃতীয় তলার দেয়ালে বড় করে লেখা রয়েছে ‘সেক্রেটারি ব্লক’। লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, “আমি ব্লক দখল করেছি বিষয়টা এমন না। আমরা যারা ছাত্রলীগ করি সবাই পাশাপাশি থাকি। তাই অনেকে মনে করেন আমরা ব্লক দখল করে আছি। যেহেতু ব্লকে আমরা সবাই পাশাপাশি থাকি তাই সেক্রেটারি ব্লক লেখা হয়েছে।”

ব্লকে ছাত্রলীগের কর্মী না উঠিয়ে টাকার বিনিময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোলার অভিযোগে তিনি বলেন, “যখন আমি একটা ব্লকে আছি তখন সেইটা আমার ব্লক নামে পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। তবে কেউ যদি ব্লক দখল করে সিট বাণিজ্য করে সেটা অবশ্যই বড় ধরনের অপরাধ। আমি এমন অপরাধের সাথে জড়িত নই।”

সিট বাণিজ্যের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “চুপিসারে অনেকেই সিট বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকতে পারে, তবে আমরা এমন কোনো তথ্য পাইনি। যদি কারো বিরুদ্ধে তথ্য সহকারে প্রমাণ পাই তাহলে অবশ্যই দল থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী রাজনৈতিক কারণে হলের ব্লক দখল করতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “হল কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়। হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবৈধভাবেই ব্লক দখল করে আছে। আমার হলের দেয়ালেও সভাপতি-সেক্রেটারির নামে আলাদা ব্লক লেখা রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে অনেকবার তদন্ত করি। এখানে যারা থাকে অধিকাংশই হলের অবৈধ শিক্ষার্থী। এসব ব্লকে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে আবাসিকতা প্রদান করা হলেও, তারা তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে উঠতে দেয় না। হল প্রশাসনও একরকম তাদের কাছে জিম্মি।

শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রভোস্ট ড. মো. একরামুল ইসলাম বলেন, “হলে ছাত্রলীগের আলাদা ব্লক বলতে কিছু নেই। কোনো সংগঠনের আলাদা ব্লক থাকাটা কাম্য নয়। হল সকল শিক্ষার্থীদের জন্য সমান। কোনো হলে যদি এমন কোনো পলিটিক্যাল ব্লক থাকে, তাহলে অবশ্যই তা অপরাধ। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা হলে অভিযান চালাবো।”

এ সব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, “কোনো ছাত্র সংগঠনেরই হলে ব্লক দখল করে রাজনীতি করা যৌক্তিক নয়। এসব দখলকৃত ব্লক উদ্ধার করার জন্য আমরা হল প্রাধ্যক্ষদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। আগামীতে আমরা হলে অভিযান চালিয়ে এসব সমস্যা সমাধান করবো।”

বিএনএ/সাকিব, ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ