বিএনএ ডেস্ক: এবারও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আমদানি হয়েছে কয়েক লাখ টন। মজুত আছে পর্যাপ্ত। তবু মসলাজাতীয় পণ্যটির বাজারে চলছে অস্থিরতা। ১৫-২০ দিন আগে রান্নার অন্যতম প্রধান এই উপকরণটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় পাওয়া যেত। মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে; সরকারও পড়েছে বেশ বিপাকে।
দেশে নতুন পেঁয়াজ ওঠার মৌসুম শেষ হতে না হতেই দাম লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সরকার। তাই তো এই পণ্যটির দাম লাগামের মধ্যে রাখতে কয়েক দিন ধরেই বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির হুমকি দিয়ে আসছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বারবার বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। যদি ব্যবসায়ীরা দাম না কমায়, তাহলে আমদানি করা হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকের কাছ থেকে বেশিরভাগ পেঁয়াজ চলে গেছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। ভারত থেকে আমদানি বন্ধের অজুহাতে মূলত তারা বাজারকে নিজেদের কবজায় নিয়ে গেছেন। সরকারের উল্লেখযোগ্য তদারকি না থাকার সুযোগও কাজে লাগিয়েছেন তারা। এ কারণে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও দাম নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারসাজির মূল নায়ক আড়তদার বা মজুতদাররা।
সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দর ৩০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় পৌঁছে যায়। দাম ৬০ টাকা হয়ে যাওয়ার পর গত ১০ মে প্রথমবারের মতো পেঁয়াজ আমদানির কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সেদিন সাংবাদিকদের তিনি দাম না কমলে আমদানির অনুমতি দেয়ার কথা বলেন। ৯ দিন পর গত শুক্রবার আবার তিনি একই কথা বলেন। কিন্তু সেদিন ঢাকার বড় বাজারে পেঁয়াজের দর ওঠে ৮০ টাকা, গলির বাজারে তা ৯০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
সরকারি হিসাবে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৬ থেকে ২৮ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের দাবি এবার উৎপাদন ৩৪ লাখ টনের কাছাকাছি, যা বার্ষিক চাহিদার চেয়ে বেশি। অবশ্য পেঁয়াজ পচনশীল এবং সংরক্ষণকালে ৩৫ শতাংশের মতো নষ্ট হয়, ওজনও কমে। আবার কয়েক লাখ টন পেঁয়াজ রাখতে হয় বীজের জন্য। তাই কয়েক লাখ টন আমদানি করতেই হবে।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, কৃষকদের থেকে আড়তদাররা পেঁয়াজ কিনে নেওয়ার পর ব্যবসা তাদের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। তারাই এখন সরবরাহ ও দামের কারসাজির সঙ্গে যুক্ত। পাইকাররা কত দামে পেঁয়াজ কিনল? মোট কত খরচ পড়ল? সেই ব্যাপারে কোনো জবাবদিহি নেই।
২০১৯ সালের নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পর পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় উঠে যায়। এরপর সপ্তাহ না হতেই দাম বেড়ে আড়াই শ টাকায় উঠে যায় পেঁয়াজের কেজি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওটাই ছিল পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দর।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ
Total Viewed and Shared : 13,319