বিএনএ,চট্টগ্রাম: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম কওমিভিত্তিক ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা। সেখানে ছাত্র ভর্তিতে এ বছর বেশ কিছু নতুন নিয়ম চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকা কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারছে না। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীরা সামাজিকমাধ্যমে কোনো পোস্ট দিলে সেটিও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
সম্প্রতি নানা ইস্যুতে কওমি আলেমদের সঙ্গে সরকারের চলমান সংকট নিরসনে এবং সরকারের চাপের মুখে পড়ে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ প্রথমবারের মতো এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৮ মে) মাদরাসা কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে স্মার্টফোন ব্যবহার না করাসহ সাতটি শর্ত যুক্ত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মজলিসে এদারী ও মজলিসে ইলমির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ মে থেকে জামিয়ার সব বিভাগের নতুন ও পুরাতন ছাত্রদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে।
ভর্তির জন্য দেওয়া শর্তগুলো হলো – আচার-আচরণ, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ তালিবুল ইলমের মানসম্পন্ন হতে হবে এবং শরিয়াহ পরিপন্থী কোনো কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া যাবে না। প্রচলিত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক কোন সংগঠন এবং আইন-শৃঙ্খলা বিরোধী কোন কার্যক্রমের সাথে কোনরূপ সম্পৃক্ত থাকা যাবে না।
শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, জামিয়ার ক্লাস ও ছাত্রাবাসসহ ক্যাম্পাসে মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। কোনো প্রকার স্মার্টফোন পাওয়া গেলে জব্দ করা হবে। সাধারণ মোবাইল ফোন আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। কোন ছাত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিলে শাস্তির যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। জামিয়া ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতে হবে। প্রত্যেক জামাতে কোটাভিত্তিক ছাত্র ভর্তি করা হবে। মেধাবী ও আখলাকী ছাত্রদের প্রাধান্য দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সদস্য মাওলানা ইয়াহইয়া বলেন, এ দেশের বেশিরভাগ কওমি মাদ্রাসা ভারতের দেওবন্দের আকিদা অনুসরণ করে। বহু বছর ধরে দেওবন্দের অনুসরণ করে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কওমি আকিদার সক্রিয়তা বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ভর্তি কার্যক্রমসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
তিনি আরও বলেন, কওমি আলেমদের রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ নেই। তাদের রাজনৈতিক কোনো অভিযোগ নেই, রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই, তারা তাদের শিক্ষার্থীদের কখনও রাজনৈতিক অভিলাষ তথা-রাজনীতি করার জন্য উৎসাহ বা উদ্দীপনা জোগায় না। আর এরই ধারাবাহিকতায় আমরা আমাদের মাদ্রাসায় রাজনৈতিক বা কোনো অরাজৈনতিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো শিক্ষার্থীকে এ মাদ্রাসায় ভর্তির অনুমতি দিয়ে থাকি না।
হাটহাজারী মাদ্রাসাটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এর আয়তন ৪.৪৩ একর বা ১৭ হাজার ৯২৭ বর্গমিটার। বর্তমানে মাদ্রাসটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১০০ জন এবং ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার।
বিএনএনিউজ/মনির