।। বাবর মুনাফ ।।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত টাইমলাইন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সেটি হচ্ছে ডিসেম্বর। আর আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করা হবে। গত ১৬ এপ্রিল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কক্ষে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছিলেন।
সরকার থেকে কোনো দিক-নির্দেশনা আসার আগেই নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে কথা বলায় ইসি’র প্রতি সন্দেহ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি। সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে কথা বলাতে নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করেছেন দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী। ২০ এপ্রিল দুপুরে আগারগাঁওয়ে ইসি কার্যালয়ে সিইসি এ এম এম নাসিরুদ্দীনের সঙ্গে এনসিপির এক বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এই সব কথা বলেন এনসিপি’র মূখ্য সমন্বয়ক।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন। সেক্ষেত্রে রোডম্যাপ ঘোষণার ব্যাপারে সতর্কতা ও নির্দেশনা দেয়ার এখতিয়ার এনসিপির আছে কিনা তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে যে সব কর্মকর্তারা অনিয়মে জড়িত ছিলেন, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। গত ১৫ বছরে যেসব ব্যক্তি জড়িত ছিলেন, তাদেরও যথাযথ আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। গেজেট প্রকাশের আগে ও নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফিকেশন দিতে হবে যে, নির্বাচন সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। এতে পরবর্তীতে ইসিকে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতি যেন গ্রহণ না করে সে কথাও বলেছেন তিনি।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও বলেছেন, ‘আমরা চাই, গ্রামীণ পর্যায়ে মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষকও যেন পার্লামেন্টে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হোক’।
মসজিদের ইমাম ও স্কুলের শিক্ষককে এনসিপি সংসদ সদস্য বানাতে চায় কেন? মসজিদের ইমাম সংসদ সদস্য হলে মসজিদে নামাজ পড়াবেন কারা? স্কুলের শিক্ষক সংসদ সদস্য হলে স্কুলে পড়াবেন কারা? এনসিপির এই দাবির যৌক্তিকতা কী? নির্বাচন কমিশন কী চাইলে মসজিদের ইমাম ও স্কুলের শিক্ষকদের সংসদ সদস্য বানাতে পারে? এমন প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।
বাংলাদেশের বর্তমান বিধিমালায় ২৫ বছর বয়সী যে কোন ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যদি তিনি ঋণ খেলাপি, অপ্রকৃতিস্থ না হন। এছাড়া সাজা ভোগের ৫ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা রাখেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেননা যদি কোন ব্যক্তি সরকারি চাকুরি করেন, লাভজনক পদে বহাল থাকেন। দেশের বেশিরভাগ স্কুলের শিক্ষক সরকারি চাকুরি করেন। মসজিদের ইমামের পদটিও লাভজনক। এনসিপি তাদের কীভাবে সংসদে পাঠাবে?
এনসিপি দাবি করেছে, নির্বাচনে যিনি প্রার্থী হবেন তাকে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে হবে। এই দাবিটি পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান নির্বাচনী বিধিতে স্বশরীরে মনোনয়ন পত্র দাখিল করার বাধ্যবাধকতা নেই। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা রোধ ও কারাগারে আটক ব্যক্তিও যেন তার সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারে সে জন্য প্রার্থীর স্বশরীরে উপস্থিতি বাধ্যতামুলক করা হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। কিন্তু দলটির অনেক শীর্ষ নেতা কারাগারে আটক আছেন। বেশিরভাগ নেতা আত্মগোপনে। তারা যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন কমিশনে এমন দাবি উপস্থাপন করেছেন!
নির্বাচনের সম্ভাব্য রোডম্যাপের বিষয়ে সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনা ছাড়া কথা না বলার বিষয়ে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারীর ‘সতর্ক ও ছবক’ দেয়া এবং নির্বাচনের সঙ্গে সাংর্ঘষিক বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করার নেপথ্যে কোন শক্তি কাজ করছে? তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও কৌতুহল আছে।
বিএনএনিউজ টুয়েন্টিফোর/ শাম্মী