ধর্ম ডেস্ক: পবিত্র রমজান কোরআন নাজিলের মাস, রহমত ও বরকতের মাস, ক্ষমালাভের মাস, নাজাতের মাস। আল্লাহ তাআলার কাছে রোজাদারের মর্যাদা অনেক। এক হাদিসে প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন- ‘যখন রমজান মাস প্রবেশ করে, বেহেশতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।’
হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম। রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই এর প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম: ২৭৬০) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রোজাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধিময়…।’ (বুখারি: ১৯০৪, মুসলিম: ২৭৬২)
কিন্তু এতকিছুর পরও কিছু মানুষের রোজা মূল্যহীন হয়ে যাবে। তাদের রোজা কোনো কাজে আসবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি: ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ: ১৬৮৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘অনেক রোজাদার এমন আছে যে, তাদের রোজা থেকে উপোস ছাড়া আর কিছুই অর্জিত হয় না। আর অনেক রাত জেগে ইবাদতকারী এমন আছে যে, তাদের সে ইবাদত থেকে রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই থাকে না।’ (মেশকাত: ১১৭)
বুখারির এক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা ও তা আমল করা পরিহার করল না, তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই’ (বুখারি: ১৯০৩)
মিথ্যা কথা ও মন্দ কাজ পরিত্যাগ না করলে তার পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই—এর ব্যাখ্যা হলো, রোজার উদ্দেশ্য হচ্ছে মনোবাসনাকে পরিত্যাগ এবং কুমন্ত্রণাদানকারী আত্মাকে বশে আনা। অতএব রোজা রেখে যখন এর উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়নি তখন সেই রোজার পরোয়া আল্লাহ করেন না। অতএব আল্লাহর প্রয়োজন না হওয়ার অর্থ দাঁড়াল, আল্লাহ তাআলা তার রোজার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং কবুল করেন না। (ফয়জুল কালাম: ৩৯৮)
তাই রোজা পালনের সময় খুব সতর্কতার সঙ্গে অতিবাহিত করতে হবে। রোজার হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে হবে এবং অশ্লীলতা ও পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। মূলত এটা হলো তাকওয়া। আর রোজার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অবলম্বন করতে পারো। (সুরা বাকারা: ১৮৩)
রোজা রেখে অযথা কথা-কাজ, গিবত, বিভিন্ন পাপাচার, মিথ্যা কথা, নাচ-গান করা, ধোঁকা দেওয়া, ব্যবসায় অধিক মুনাফা অর্জনের চেষ্টা, অপরের সম্পদ হরণের চেষ্টা, আল্লাহ ও বান্দার হক নষ্ট করা, হারাম উপার্জন, অপচয়-অপব্যয়, মা-বাবার সঙ্গে অসদাচরণ, প্রতিবেশীর খোঁজ না রাখা ইত্যাদি তাকওয়া পরিপন্থী কাজ। এসব থেকে দূরে থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবীজি (স.)-এর অভিশাপ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ