বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রেরিত নকশা অনুযায়ী মূল রাস্তার মধ্যখানে পিলার স্থাপনের মাধ্যমে ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। একইসঙ্গে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহি ট্রাক ও লরির চলাচল স্বাভাবিক রাখতে এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে কোনোরকম বিঘ্নিত না ঘটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) ভবনের বোর্ড রুমে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (বারিক বিল্ডিং থেকে বন্দর ভবন পর্যন্ত অংশ) অ্যালাইমেন্ট চূড়ান্ত করতে আয়োজিত জরুরি সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভায় বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কমান্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার অ্যাডমিরাল এম মোজাম্মেল হক।
সভায় উপস্থিত সকলের সম্মতিক্রমে যেসব সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করা হয়– বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রেরিত নকশা অনুযায়ী মূল রাস্তার মধ্যখানে পিলার স্থাপনের মাধ্যমে ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। নির্মাণকাজ চলাকালীন সময়ে রাস্তার দুদিকে দুই লেইন করে মোট চার লেইন ফ্রি রেখে নির্মাণ কাজ করতে হবে; যাতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত না হয়। ফ্লাইওভারের যে পাশে কেপিআই এলাকা থাকবে সেই পাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শব্দ নিরোধক উঁচু ফেন্সিং তৈরি করতে হবে। নির্মাণকালীন সময়ে সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর এবং বাংলাদেশ পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সাথে সমন্বয় করতে হবে। বন্দরের বিদ্যমান গেইটসমূহে চলাচলকারী ট্রাক ও লরি প্রয়োজনে সিপিএআর গেইটে সাময়িক শিফট করা হবে। বন্দরের বিদ্যামান গেইটসমূহের সম্মুখে যাতে কোনো পিলার স্থাপিত না হয় সেজন্য প্রয়োজনে স্প্যানের দূরত্ব সমন্বয় করতে হবে।
জানা যায়, ফ্লাইওভারের এলাইমেন্টের ব্যাপারে সমন্বয় কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় চার একর জমি এবং সাধারণ জনগণের প্রায় আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না এবং সাধারণ জনগণের স্থাপনা বাবদ কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। এতে চউক এর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সকল সদস্য, সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগীয় প্রধান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)-এর প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাক্স-রেনকিং জেভি এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং অন্যান্য কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। চট্টগ্রাম নগরীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এটাই সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। লালখান বাজার থেকে বারিক বিল্ডিং, বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে সল্টগোলা ক্রসিং, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং এবং সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত চার ধাপে কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেনের প্রকল্পটিতে র্যাম্প ও লুপ নিয়ে দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৫৪ ফুট। প্রতিটি র্যাম্প হবে দুই লেনের। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি এলাকায় ২৪টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) থাকবে। নগরীর টাইগার পাসে ৪টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে ২টি, নিমতলী মোড়ে ২টি, কাস্টমস মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ৪টি, কেইপিজেডে ২টি, কাঠগড়ে ২টি ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি র্যাম্প থাকবে। উড়ালসড়কের মতোই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর দিয়ে চলবে যন্ত্রচালিত যান।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে নগর থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছা যাবে মাত্র ৩০ মিনিটে। চট্টগ্রামের যাতায়াতে স্বপ্ন দেখাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সময়ও বাঁচাবে ২ ঘণ্টা। বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগ। যানজট কমবে নগরে। বিকশিত হবে পর্যটন খাত।
বিএনএনিউজ/মনির