27.5 C
আবহাওয়া
৫:৫০ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ২২, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিভক্ত সমন্বয়করা!

দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিভক্ত সমন্বয়করা!

দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিভক্ত সমন্বয়করা!

।। রেহেনা ইয়াছমিন ।।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারিতে অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুই ছাত্রীও রয়েছেন। হামলায় আহতরা ঢাকার বিভিন্ন কলেজ, মাদ্রাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে তিনজনের আঘাত গুরুতর। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর বিকেলে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারের সামনে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। সেখানে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাফায়াত হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশীদ ও আসাদ বিন রনির উপস্থিতিতে গত সোমবার ডেমরায় তাঁদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছিল। এ ঘটনার বিচার চাইতে তাঁরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। তাঁরা আশা করেছিলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করবেন।

সাফায়াত বলেন, কার্যালয়ের সামনে তাঁরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। তখন ডেমরার হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা এলে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা ইমরান নামের একজন বলেন, ‘সমন্বয়কদের গুনি না, গুনার টাইম নাই।’ এরপর তাঁকে টেনে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যায় কয়েকজন। তখনই দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে উল্লেখ করে সাফায়াত অভিযোগ করেন, সমন্বয়কেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্টগ্র্যাজুয়েট কলেজ শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ শাকিল বলেন, কার্যালয়ের শাটার বন্ধ করে ভেতরে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পেটানো হয়। ডেমরায় যাঁরা হামলা করেছিলেন, এই হামলাতেও তাঁরা অংশ নিয়েছেন।

মারামারির খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ কার্যালয়ে আসেন। এই সময় সাংবাদিকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে এবং অভিযোগ করেন মারামারির সময় সাংবাদিকদের মুঠোফোন বের করতে বাধা দেওয়া হয়। আবার অনেকের মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মারামারির ভিডিও মুছে ফেলা হয়। এমনকি কয়েকজন সাংবাদিক মারধরের শিকার হন।

সাংবাদিকরা হাসনাতের উদ্দ্যেশে বলেন ছাত্রলীগ সাংবাদিকদের সঙ্গে যে কাজটা করত, সেই কাজই এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করছে।

এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্যই আন্দোলন হয়েছে এবং সেটি অব্যাহত থাকবে। ‘বিষয়টা উদ্বেগজনক। বিষয়টা আমি দেখব, জানব। পুরো পরিস্থিতি একটু বুঝতে হবে।’

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলেছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিপথগামী কয়েকজন মানুষ এসে বিভিন্ন অপ্রীতিকর স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা জোরজবরদস্তি করে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেন। এতে কার্যালয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে তৎক্ষণাৎ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রিফাত রশিদ, আহনাফ সাঈদ খান, নাঈম আবেদিন, আসাদ বিন রনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে আগত ব্যক্তিদের দাবিদাওয়া শুনতে চান; কিন্তু তাঁরা সহযোগিতার বদলে নির্বাহী সদস্যদের ওপরও চড়াও হন। এতে নির্বাহী সদস্য নাঈম আহত হন। পরে অন্য নেতা–কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। তখন পরিস্থিতি উত্তপ্তকারীদের কার্যালয় ত্যাগে বাধ্য করা হয়।

এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অআন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা। অন্যথায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, অবস্থানের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন তারা।

যতই দিন যাচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও তাদের সমর্থকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। তাদের কার্যক্রম হয়ে পড়েছে হ-য-ব-র-ল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়া তারা কোথাও, স্বাভাবিক সভা-সমাবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফলে একদিকে নিজেদের অন্ত:কোন্দল অন্যদিকে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও তাদের সহযোগী রাজনৈতিক প্লাটফর্ম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সমন্বয়করা ঘোষিত সময় অনুয়ায়ি, আগামী মাসে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে, ভোটের মাঠে নামতে পারবে কীনা —তা নিয়ে সংশয় সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বিএনএনিউজ/ সাকিব/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ