বিএনএ, ঢাকা: শহরজুড়ে জাফরান পতাকা। নানান রঙের ফুলের বাহার। রঙিন বাতির আলোকসজ্জায় সেজেছে রাস্তাঘাট, দালান-কোঠা-অফিস। ছোট-বড় গাড়িতেও একই সাজসজ্জা। গান-বাজনা, খাওয়া-দাওয়া, হই-হুল্লোড়ের পাশাপাশি কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। মহা ধুমধামে মহা আয়োজনে প্রায় ৩ বছরের নির্মাণকাজ শেষে ডাকঢোল পিটিয়ে দুই হাজার কোটি টাকায় অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তার আগে ভারতের তামিল নাড়ুর প্রাচীন রামনাথস্বামী মন্দিরের পাশে অবস্থিত অগ্নিতীর্থম সৈকতে ‘পবিত্র ডুব’ দেন তিনি। এই শিব মন্দিরটি তামিলনাড়ুর রামনাথপুরামের রামআশ্রম দ্বীপে অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে, শ্রী রাম এখানে শিব লিঙ্গ স্থাপন করেছিলেন। এছাড়া রাম এবং সীতা দেবি এখানে পূজা করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, নতুন এ মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছে বাবরি মসজিদের স্থানে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্যানারে উগ্রবাদী হিন্দুরা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলে। তারা দাবি করে, সম্রাট বাবর মন্দির ভেঙে ষোড়শ শতাব্দিতে এখানে মসজিদ তৈরি করেছিলেন। ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ অযোধ্যার মূল বিতর্কিত ২.৭৭ একর জমি ‘রামলালা’কে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। ২.৭৭ একরের বিতর্কিত জমি ঘিরে কেন্দ্রের অধিগৃহীত ৬৭ একর জমিও পেয়েছিল হিন্দু পক্ষ। মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলিম পক্ষকে অযোধ্যাতেই ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মোদির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ওই সময় অঙ্গীকার করছিল— ক্ষমতায় আসতে পারলে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় নতুন মন্দির তৈরি করে দেবে তারা। সেই কথা অনুযায়ী, মন্দির তৈরি করেছেন মোদি। নতুন মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোদি ছাড়াও ৮ হাজার অতিথি ছিলেন। আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছেন অযোধ্যা মামলায় রায় দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের পাঁচ বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে চার জনই অবসর নিয়েছেন। আর এক জন বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। কিন্তু এই পাঁচ জনের মধ্যে এক মাত্র অশোক ভূষণই অযোধ্যায় গেছেন রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে।
এইসব অতিথির মধ্যে যেমন রয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তেমনই রয়েছেন সিনেমা জগৎ, ক্রীড়া জগতের তারকারাও। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট জনদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে অযোধ্যায়। তাঁদের জন্যই বিশেষ ভাবে তৈরি করা হয়েছে রামমন্দিরের মহাপ্রসাদের একটি বাক্স। প্রত্যেককে বাদামি রঙের কাগজের ব্যাগে লালচে মেরুন রঙের কার্ড বোর্ডের একটি বাক্স তুলে দেওয়া অতিথিদের হাতে।
সেই বাক্সের উপরে রয়েছে সোনালি রঙের রাম মন্দিরের ছবি। ডালা খুললেই দেখা গেছে ছোট ছোট খোপে রাখা নানারকম জিনিস। সেগুলি কী? তার মাহাত্ম্যই বা কিসে, তা স্পষ্ট করে লেখা রয়েছে বাক্সের ঢাকনার নীচে— ‘‘কন্দমূল, সরযূ নীর, কুমকুম এবং রুদ্রাক্ষ’’
তবে এ ছাড়াও আরও অনেককিছুই রয়েছে বাক্সের ভিতরে। যেমন দেশি ঘি, পাঁচ রকমের শুকনো ফল, বেসন এবং চিনি দিয়ে বানানো লাড্ডু। হাতের কব্জিতে বাঁধার জন্য লাল রঙের তাগা, সুপুরি এবং না ভাঙ্গা চল যাকে ‘অক্ষত’ বলা হয়। এর সঙ্গেই একটি ছোট বোতলে সরযূ নদীর জল, একটি কৌটোয় সিঁদুর, রুদ্রাক্ষ আরও একটি কৌটোয় এবং একটি ছোট্ট বাক্সে ভরা রাম কন্দ মূল। রাম ভক্তদের বিশ্বাস বনবাসে থাকাকালীন এই মূল খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করেছিলেন স্বয়ং রাম।
বিএনএ/ ওজি/ হাসনা