বিএনএ: ছবি: বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় নতুন করে তৈরি হওয়া অস্থিরতার বিষয়ে চীনকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ। এ সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলাপ করতে বেইজিংকে অনুরোধও জানিয়েছে ঢাকা। জবাবে চীন তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকা-বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য অভিন্ন।
রোববার (২২ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রোববার সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এ সময় চীনের রাষ্ট্রদূত জানান, খুব শিগগির মিয়ানমারের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবে।
বৈঠক শেষে আলাদাভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও চীনের রাষ্টদূত। সীমান্তের বিষয়ে চীনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই। চীনের রাষ্ট্রদূতকে বিস্তারিত জানিয়েছি, যেন তারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে। তিনি (রাষ্ট্রদূত) প্রত্যাশা করছেন, এ ধরনের সংহিসতা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না। আমরা এটাও জানিয়েছি যে মিয়ানমারের একাধিক অঞ্চলে এ জটিলতা আছে।’
সীমান্ত নিয়ে বাংলাদেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের দুটি বিবদমান সংগঠন, বিচ্ছিন্নতাবাদী বা আর্মস গ্রুপ যেটাই বলি না কেন, তাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছে শূন্যরেখায়। যেটা বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে এবং সেখানে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি প্রায় পুরোটাই পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে রোববার একই বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমাদের সীমান্তের শূন্যরেখায় মিয়ানমারের দুটো দল মারামারি শুরু করেছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। যার ফলে অনেক রোহিঙ্গা সীমান্ত দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করছে। আমরা সীমান্তে প্রটেকশন দিয়ে দিয়েছি। আমরা কাউকে ঢুকতে দিইনি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এদিকেও একটা আতঙ্ক হচ্ছে। গোলাগুলি হচ্ছে, মারামারি হচ্ছে, লোক মারাও গেছে। আমরা ওখানে খুব সতর্ক অবস্থায় আছি, যাতে আমাদের অসুবিধা না হয়। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আমরা চাইছি এ সংঘাতটা যেন বন্ধ হয়।’
বিদেশি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি মিডিয়ায় দেখেছি, পশ্চিমা দেশ মিয়ানমারে প্রচুর অস্ত্র সহযোগিতা করছে। আগে আমরা শুনতাম, এবার বিদেশি পত্রিকায় দেখেছি। দেখে আমরা মর্মাহত হয়েছি।’
বৈঠক শেষে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা মোকাবিলা করছে, তার জন্য চীন সহানুভূতিশীল। বৈঠকে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ অনেক ভুক্তভোগী। আপনারা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। রোহিঙ্গারা যেখান থেকে এসেছে সেখানে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে।’
সামনের অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীনের কাছ থেকে আরও প্রকল্প ও বিনিয়োগের জন্য একসঙ্গে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত।
পরে সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অংশীদার হয়ে থাকার জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানান। করোনা মোকাবিলায় সহযোগিতা করায় এবং মহামারিকালে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের দেশে ফিরতে ও পরে আবার চীনে প্রত্যাবর্তন করে পড়ালেখা আবার শুরুর সুযোগ করে দেয়ার জন্যও চীনকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী।
জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগে চীনের সক্রিয় ভূমিকার জন্যও প্রতিমন্ত্রী দেশটিকে ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ‘পাইলট প্রকল্প’ দ্রুত সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন শাহরিয়ার আলম।
বিএনএনিউজ/এ আর