পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩২০
দু’একদিন পরই হক সাহেব আমাকে বললেন, “করাচি থেকে খবর এসেছে, আমাকে যেতে হবে। তুই ও আতাউর রহমান আমার সাথে চল। নান্না, মোহন মিয়া ও আশরাফউদ্দিন চৌধুরীও যাবে, বেটাদের হাভভাব ভাল না।” আমি প্রস্তুত ছিলাম, কারণ আমাকে যেতেই হত। শহীদ সাহেব অসুস্থ হয়ে আছেন, তাঁকে দেখতে।
আমরা করাচি পৌঁছালাম। প্রথমেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সাথে আমাদের পূর্ব বাংলার সমস্যা নিয়ে আলোচনা হল। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আমাদের কি কি সাহায্যের প্রয়োজন তাও জানান হল। পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের বিরুদ্ধে ভীষণভাবে মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট সরকারই নাকি এই দাঙ্গা সৃষ্টি করেছে। একথা কেউ কোনোদিন শুনেছে কি না আমার জানা নাই যে, সরকার নিজেই দাঙ্গা করে নিজেকে হেয় করার জন্য! আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মালিক সরকার, সে কেন দাঙ্গা করে বদনাম নিবে? দাঙ্গা বাধিয়েছে যারা পরাজিত হয়েছে তারা। করাচি থেকে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে দুনিয়ার কাছে হেয় করতে এই দাঙ্গার সৃষ্টি করা হয়। তার সুযোগ খুঁজছে কোনো রকমে প্রাদেশিক সরকারকে বরখাস্ত করা যায় কি না?
কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সাথে আলোচনা হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া আমাদের তাঁর রুমে নিয়ে বসতে দিলেন। হক সাহেবও আছেন সেখানে। মোহাম্মদ আলী বেয়াদবের মত হক সাহেবের সাথে কথা বলতে আরম্ভ করলেন। আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করছিল। এমন সময় মোহাম্মদ আলী আমাকে বললেন, “কি মুজিবর রহমান, তোমার বিরুদ্ধে বিরাট ফাইল আছে আমার কাছে।” এই কথা বলে, ইয়াংকিদের মত ভাব করে পিছন থেকে ফাইল এনে টেবিলে রাখলেন। আমি বললাম, “ফাইল তো থাকবেই, আপনাদের বদৌলতে আমাকে তো অনেক জেল খাটতে হয়েছে। আপনার বিরুদ্ধেও একটা ফাইল প্রাদেশিক সরকারের কাছে আছে।” তিনি বললেন, “এর অর্থ।”
আমি বললাম, “যখন খাজা নাজিমুদ্দীন সাহেব ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী হয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন তখন আপনাকে মন্ত্রী করেন নাই। আমরা যখন ১৯৪৮ সালে প্রথম বাংলা ভাষার আন্দোলন করি, তখন আপনি গোপনে দুইশত টাকা চান্দা দিয়েছিলেন, মনে আছে আপনার? পুরানা কথা অনেকেই ভুলে যায়।” হক সাহেব ও সৈয়দ আজিজুল হক সাহেব দেখলেন হাওয়া গরম হয়ে উঠছে। তখন বললেন, “এখন আমরা চলি, পরে আবার আলাপ হবে।” আমি এক ফাঁকে হক সাহেবের সাথে যে সে বেয়াদবের মত কথা বলেছিল, সে সম্বন্ধেও দু’এক কথা শুনিয়ে দিয়েছিলাম।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর: ২৬৭-২৬৮।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩১৯