।। আশরাফ উদ্দিন।।
বিএনএ, মিরসরাই: চট্টগ্রামের আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র পাহাড়, পানি আর সবুজ প্রকৃতির সমন্বিত রুপের কেন্দ্রস্থল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মিরসরাই মহামায়া লেক। স্বচ্ছ শীতল পানিতে পানকৌড়িদের জলকেলি, লেকের ধারে পাহাড়ের কিনারে সবুজ বৃক্ষে শীতের অতিথি পাখিদের কলকাকলি এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এমন স্বর্গীয় সুন্দরের সুধা পানে ছুটে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত প্রকৃতি প্রেমী পর্যটক।
লেকের স্বচ্ছ পানিতে সাতার, কায়াকিং, নৌভ্রমণ, ঝর্ণা দর্শণ, জোসনা ও জোনাকি রাতে লেকের ধারে ঝিুম রাতে গ্রুপ ক্যাম্পিং করা এখানে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। কিন্তু যেমনটি বাতির নিচে থাকে অন্ধকার ঠিক তেমনি এই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে পর্যটকরা এখানে এসে সম্মুখিন হন নানা সমস্যায়। তারমধ্যে খাবার পানীয় সমস্যা, মানসম্মত শৌচাগারের অভাব, পর্যাপ্ত পার্কিং সমস্যা, অতিরিক্ত পার্কিং চার্জ, নেই পর্যটকদের কোন বিশ্রামগার, মাত্রাতিরিক্ত বোট ভাড়া, নারী পর্যটকদের নেই আলাদা শৌচাগার, বিশ্রামাগার ও প্রার্থনা কক্ষ। পর্যটকদের স্বার্থ এখানে উপেক্ষিত। এসব সমস্যার কারণে পর্যটকরা তাদের কাক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেমন পর্যটন বিমুখ হচ্ছে তেমনি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন পর্যটন কেন্দ্রের ইজারাদার।
মিরসরাই মহামায়া লেকের ইজারাদার শাহজাহান এন্টারপ্রাইজের প্রোফাইটর সাবেক মেয়র শাহজাহান জানান, মহামায়া লেকের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর শত শত পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন। কিন্তু এখানে আসার পর পর্যটকরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখিন হন। এখানে খাবার পানি, মানসম্মত শৌচাগার, বিশ্রামাগার ও মহিলাদের প্রার্থনার ব্যবস্থা নেই। পুরাতন কিছু স্থাপনা থাকলেও সেগুলি অকেজো হয়ে পড়ে আছে মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লেকের প্রবেশ পথের বাম পাশেই মহামায়া ক্যান্টিন। কিন্তু সেটি র্দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রয়েছে। তার বাম পাশে পাহাড়ের উপরে ৬ কক্ষের একটি ভবন কিন্তু সেটির উপরের ছাঁদ নেই। বিভিন্ন মালামাল পড়ে আছে এবড়ো থেবড়ো। লেকের বাঁধ পেরিয়ে উত্তর পশ্চিমে প্রায় ৭শ ফুট উপরে উঠলেই আরেকটি ভবন সেটিও দেখা যায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে দুটি বাথরুম একটি কিচেন রুম ও একটি উন্মুক্ত কক্ষ রয়েছে। এছাড়া পথে পর্যটকদের বসার জন্য ৪টি ছাতা ও বেশ কয়েকটি টুল নির্মাণ করা আছে। কিন্তু এসব স্থাপনা কখন চুনকাম হয়েছে তার কোন চিহ্ন নেই। মূলত এখানে পর্যাপ্ত স্থাপনা থাকলেও পরিচর্যা ও মেরামতের অভাবে পর্যটকদের ব্যবহার অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।
এখানে আগত একাধিক স্থানীয় পর্যটক ক্ষোভের সাথে অভিযোগ করে বলেন, পার্কিং থেকে শুরু করে প্রবেশ পথ ও লেকে ঘুরতে প্রতি কদম গলাকাটা টাকা আদায় করে ইজারাদাররা। কিন্তু পর্যটকদের সুবিধার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যে সকল স্থাপনা তৈরি হয়েছে এসব শুধু টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই করা হয়েছে। টাকা হাতানো শেষ এসবের আর কোন যত্ন নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না কেউ।
এখন আবার ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণের জন্য। এই বরাদ্দের মধ্যে গত এক বছর ধরে নির্মাণ করা হয়ছে একটি তথ্য সেবা কেন্দ্র । অথচ এর আগেই নির্মাণ করা ৩টি স্থাপনার কোন ব্যবহার নেই।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের করেরহাট ও নারায়ণহাট রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মুহাম্মদ খান বলেন, পুরাতন স্থাপনা গুলির প্রজেক্ট মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেগুলি এখন আর মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন বরাদ্দ অনুযায়ি নতুন প্রজেক্টের কাজ করছি আমরা। নতুন প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে তথ্য সেবাকেন্দ্র নির্মাণ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য ব্যরাক নির্মাণ, টয়লেট নির্মাণ, গোলছাতা ঘর নির্মাণ, বনায়ন, গাড়ি পার্কিং এরিয়া, ভূমি অধিগ্রহণ, বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ। তবে পুরাতন প্রজেক্টের আওতায় নির্মিত ভবন গুলির জন্য মেরামতের বিল বরাদ্দ হলে সেই অনুযায়ী কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক শাহ এর দুটি ফোন নাম্বারে গত ১৫ দিন ধরে বার বার যোগাকরার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস জানান, মহামায়ার সকল কর্মকাণ্ডের দায়িত্বে রয়েছেন মোহাম্মেল হক শাহ। তার কাছেই সকল তথ্য পাবেন। সরকারী নাম্বারে ১৫ দিন চেষ্টা করেও না পাওয়াটা দুঃখের বিষয়। রোববার দুপুর ১টার দিকে উনার সাথে একটা মিঠিং আছে সেখানে এব্যাপার উনার সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো।
উল্লেখ্য, মিরসরাই উপজেলার ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া সেচ প্রকল্প। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। বর্তমানে মহামায়াকে আধুনিকায়ন করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ। পর্যটক আকর্ষণে নির্মাণ করা হচ্ছে তথ্য সেবাকেন্দ্র, টয়লেট, গাড়ি পার্কিংসহ বিভিন্ন উন্নয়ন। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ২০১৭ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় মহামায়া সেচ প্রকল্পের আধুনিকায়নের জন্য ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
বিএনএ/এমএফ