24 C
আবহাওয়া
১০:১১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বিএনপি চায় খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকুক-ড. হাছান মাহমুদ

বিএনপি চায় খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকুক-ড. হাছান মাহমুদ

এসোসিয়েশন অভ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো

ঢাকা :  আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি’র উদ্দেশ্য বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য ভালো করা নয়, বিএনপি চায় বেগম জিয়া সবসময় অসুস্থ থাকুক। তাহলে উনারা সবসময় বলতে পারবেন তাকে বিদেশ পাঠাতে হবে। তারা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি করছেন, যেটি অনভিপ্রেত।

রোববার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর বনানীতে একটি অভিজাত হোটেলে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস উপলক্ষে এসোসিয়েশন অভ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকশেষে বেগম জিয়াকে বিদেশে নিতে বিএনপির শনিবারের গণঅনশন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল বেগম জিয়াকে বিদেশ নেয়ার জন্য নয়া পল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন জায়গায় গণঅনশন করা হয়েছে। নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে দোকানপাট থেকে খবর যেটি জানা যাচ্ছে, গণঅনশনের সময় সেখানে খাবারের দোকানগুলোতে ভালো বেচা-বিক্রি হয়েছে। সেখানে অনেক রাজনৈতিক নেতা বক্তব্য রেখেছেন যাদেরকে মানুষ রাজনীতিতে পরিত্যক্ত মনে করে। যারা রাজনীতিতে গুরুত্বহীন হয়ে গেছেন, তারা সেখানে গিয়ে অনেকেই তাদের গুরুত্বটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন।’

ড. হাছান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা হয় এবং ভালো চিকিৎসা হচ্ছে। বাংলাদেশে বিশ্বমানের বেশ কয়েকটি হাসপাতালও হয়েছে। বেগম জিয়াকে তার হাঁটুর ব্যথার জন্য কিংবা পেটের অসুবিধার জন্য কেন বিদেশ পাঠাতে হবে।’

‘কথায় কথায় তারা বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছেন, না কি বেগম জিয়া পালাতে চাচ্ছেন, সেটিই হচ্ছে প্রশ্ন’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।

ইতিপূর্বেও বেগম জিয়া যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখনও বিএনপি প্রতিদিন বেগম জিয়াকে ‘বিদেশ পাঠাতে হবে, পাঠাতে হবে’ এই জিকির তুলেছিল, কিন্তু তিনি দেশের ডাক্তারদের চিকিৎসায় ভালো হয়ে ঘরে ফেরত গিয়েছেন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, অবশ্যই বেগম জিয়া সুস্থ থাকুক এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরত যান সেটিই আমি কামনা করি, তবে তার স্বাস্থ্য নিয়ে রাজনীতি অনভিপ্রেত।

এসোসিয়েশন অভ টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-এটকো

এটকো’র সভাপতি অঞ্জন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, আরটিভি’র ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মোঃ জসিম উদ্দিন, দেশ টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, একুশে টিভি’র প্রধান নির্বাহী পীযুষ বন্দোপাধ্যায় ও মাছরাঙা টিভি’র বার্তাপ্রধান রেজওয়ানুল হক রাজা বক্তব্য রাখেন। এটকোর পরিচালকবৃন্দ ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ জ্যেষ্ঠ টিভি সাংবাদিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দেশে লাইসেন্স প্রাপ্ত বেসরকারি টেলিভিশনের সংখ্যা ৪৫

বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে বৈঠক আয়োজনের জন্য এটকোকে ধন্যবাদ জানিয়ে  তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী তাঁর প্রাণবন্ত কথনে বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে একটি টেলিভিশন ছিলো, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বেসরকারি টেলিভিশনের যাত্রা শুরু করেছিলেন। আজকে একে একে ৩৪টি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে, আরো কয়েকটি প্রস্তুতি নিচ্ছে, ৪৫টির লাইসেন্স দেয়া আছে। সাংবাদিক, কলাকুশলী ছাড়াও টেলিভিশন শিল্পে সবমিলিয়ে প্রায় লাখখানেক মানুষ যুক্ত। আরো অনেকেই কন্টেন্ট ও বিজ্ঞাপন বানায় ও বিক্রি করে। প্রায় পাঁচ কোটি বাড়িতে টেলিভিশন আছে। প্রচন্ড ব্যস্ত মানুষটিও একটি সময় একটু হলেও টেলিভিশন দেখেন, আমিও দেখি। সবকিছু দেখার সময়-সুযোগ হয় না, খবর দেখি।’

মানুষের জীবনের ওপর টেলিভিশনের একটা প্রভাব আছে

টেলিভিশনকে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের একটি অংশ বর্ণনা করে ড. হাছান বলেন, ‘অনেকের ঘরে টেলিভিশন না থাকলেও দেখা যায় চায়ের দোকানে বসে টেলিভিশনে নাটক, সিনেমা দেখছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি মানুষের জীবনের ওপর টেলিভিশনের একটা প্রভাব আছে। পুরো টেলিভিশন শিল্পটা জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবে। টেলিভিশন জীবন, সমাজ, দেশ গঠনে এবং রাষ্ট্রকে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য টেলিভিশন কাজ করবে, এটিই বিশ্ব টেলিভিশন দিবসে আমার প্রত্যাশা।’

‘প্রধানমন্ত্রী টেলিভিশন লাইসেন্সগুলো একজন একজন করে দিয়েছেন, কোনো টেন্ডারের মাধ্যমে নয়’ স্মরণ করিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যাদেরকে উপযুক্ত মনে করেছেন তাদেরকে দিয়েছেন, যাতে দেশ, সমাজ, সাংবাদিকরা উপকৃত হবে এবং একইসাথে দেশ ও সমাজ গঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে। তাই এ দিবসে আমার  বিনীত অনুরোধ, আমরা যেন দেশাত্মবোধ, মমত্ববোধ, মূলবোধ এবং মেধায় সমৃদ্ধ একটি নতুন প্রজন্ম গঠনে এই টেলিভিশন শিল্পকে কাজে লাগাতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করবো।’

আইন অনুযায়ী ক্লিনফিড পাঠাতে হবে

টেলিভিশন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপগুলো নিয়ে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনেক সমস্যা সমাধান হয়েছে এবং অনেক সমস্যা আছে। বাংলাদেশে বিদেশি যে কোনো চ্যানেল সম্প্রচার করতে পারে। তবে তাকে আইন অনুযায়ী ক্লিনফিড পাঠাতে হবে। বাংলাদেশের কেউ কেউ বিদেশি চ্যানেলগুলোর ফিড ক্লিন করার দায়িত্ব নেয়ার চেষ্টা করছে। এর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

কারণ, আইন অনুযায়ী ক্লিনফিড পাঠানো বিদেশি চ্যানেলগুলোরই দায়িত্ব। তারা নেপাল, শ্রীলংকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠায়, সেখানে বাজার অনেক ছোট। আর আমাদের দেশে পাঠাবে না, আমরা দায়িত্ব নিয়ে ক্লিনফিড করবো, তার প্রয়োজন নেই। ক্যাবল নেটওয়ার্কে টিভির ক্রম ঠিক ছিলো না, এখন হয়েছে। ক্যাবল অপারেটররা নিজেরাই বিজ্ঞাপন দেখাতো, সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে এটি দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছি।’

বিদেশি বিজ্ঞাপন ডাবিং প্রচার বন্ধে পদক্ষেপ

বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানালে শিল্পীপ্রতি দুই লাখ টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে। এতে আমাদের শিল্পীরা উপকৃত হবে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, মানুষকে ভাবায়, কাঁদায় এমন অনেক দেশি বিজ্ঞাপন আছে। বিদেশি বিজ্ঞাপনকে ডাবিং করে এখানে প্রচার বন্ধ করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আলোচনা করেছি, পদক্ষেপ নেয়া হবে। ক্লিনফিড হওয়ার কারণে দেশের টেলিভিশন শিল্প যে পাঁচশ’ বা সাতশ’ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন হারাতো সেগুলো এখন দেশের টিভিগুলো পাওয়া শুরু করেছে।

দেশে টেলিভিশনগুলোর রেটিং বা টিআরপি একটা সংস্থা করতো, অন্যান্য দেশে কিভাবে করা হয়, বিশেষ করে ভারতে কিভাবে করা হয় অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে এসেছি এবং খুব সহসা আমরা এতে শৃঙ্খলা আনবো, জানান তিনি।

গণমাধ্যমকর্মী আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে

ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেম ডিজিটাল করা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সেটি একদিনেই চট করে হয়ে যাবে না, সেটিকে আমরা ভাগ করে দিয়েছি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রথম, পরে মেট্রোপলিটন শহর, পুরনো জেলা শহর, তারপর অন্যান্য জেলা শহরগুলোতে করবো।  এজন্য সবার সহযোগিতা ও প্রচার প্রয়োজন, কারণ মানুষকে সেট টপ বক্স নিতে হবে। এতে সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট। জনগণের ওপর যাতে অযাচিতভাবে বেশি টাকায় সেট টপ বক্স বিক্রি করা না হয় সেটা আমরা মনিটর করবো।

হাছান মাহমুদ জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। খুব সহসা এটি জাতীয় সংসদে পৌঁছাতে পারবো আশা করি। এটি পাস হলে সম্প্রচার গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টদের আইনী সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর হবে। সম্প্রচার আইনও আইন মন্ত্রণালয়ে আছে, তারা কাজ সমাধা করলেই সেটি আমাদের মন্ত্রণালয় হয়ে জাতীয় সংসদে যাবে।

টেলিভিশনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আরটিভির সিইও আশিক রহমান বলেছেন, বিভিন্ন টেলিফোন কোম্পানিগুলো তারা এন্টারটেইনমেন্ট কন্টেন্ট তৈরি করে ইউটিউব চ্যানেল হিসেবে সেগুলো চালাচ্ছে। তাদেরকে সেই লাইসেন্স দেয়া হয়নি। সেজন্য বিটিআরসি এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আমরা বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছি। তারপর তাদের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে। এটকোও চিঠি দিতে পারে। লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ করে কেউ কিছু করবে সেটি হতে পারে না।’

অপর বক্তাবৃন্দ দেশে টেলিভিশনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং এই শিল্পের বিকাশে সরকারের অব্যাহত সহায়তা কামনা করেন। টেলিভিশনকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেবার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন রাখেন তারা।

বিএনএনিউজ,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ