লাইফস্টাইল ডেস্ক: নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন। শরীর ফিট থাকলে সুখের মুহূর্তগুলো আরো ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব। অফার দেখেই হুট করে খাবার ক্রয় করে ফেললেই হবে না। খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা নিয়েও বিবেচনা করতে হবে। নিজেদের শরীরের সচেতনতা নিজেদেরই করে নিতে হবে। নিজেকে ভালবাসতে হবে, নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, নিজে যা খাচ্ছেন সে সম্পর্কে সতর্ক থাকা অনেক প্রয়োজন এবং সুষম খাবারের পরিকল্পনা দিকে অনেক নজর দিতে হবে।
আর তাই যেকোনো খাবার কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে খাবারটা কতটা মানানসই এবং স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ভালো হতে পারে। প্যাকেট জাতীয় খাবার কেনার আগে অবশ্যই কিছু জিনিস খেলায় রাখা প্রয়োজন। যেমন-
১. খাবারের মেয়াদ আছে কিনা।
২. কোন কোন উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি।
৩. খাবারের পুষ্টিগত এবং ক্যালরির মাত্রা কতটুকু রয়েছে।
৪. স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক এমন উপাদান খাবারে বিদ্যমান আছে নাকি।
৫. প্রিজারভেটিভের মাত্রা ঠিক আছে কিনা।
৬. খাবারের ওজন এবং অবশ্যই খাবারের মূল্য দেখে নিতে হবে।
আমাদের দেশসহ অনেক দেশেই বড় বড় সুপার শপগুলোতে দেখা যায় একটা প্যাকেটজাত খাবারের সঙ্গে আরেকটি খাবার ফ্রি থাকে ৷ এই খাবারগুলো কেনার আগে অবশ্যই সর্তক থাকতে হবে। প্যাকেটের গায়ে লেখা প্রতিটি জিনিস ভালো ভাবে পড়ে তারপর ক্রয় করতে হবে। নিজেদেরকে খাবার সম্পর্কে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। অফার দেখেই হুট করে খাবার ক্রয় করে ফেললেই হবে না। খাবারগুলো কতটা স্বাস্থ্যকর সেটা নিয়েও বিবেচনা করতে হবে।
আমাদের দেশের এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্যের বিরূপ প্রভাব নিয়ে খুবই কম চিন্তা করে থাকে। খাবার কেনা নিয়ে সচেতনতা খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা দেয়। অনেক মানুষ আছে যারা শুধু খাবার টাকা দিয়ে কিনেই নিয়ে যায়, কিন্তু খাবারের গুনগত মান কতটুকু ভালো পুষ্টিগত মান ঠিক আছে কিনা এগুলো যাচাই করে না।
মানুষ খাবারের মান নির্নয় করাকে সবচেয়ে বেশি অবহেলা করে থাকে। আমাদের দেশের মানুষেরা এটা ভেবে নিয়েছে যে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর আমরা অসুস্থ হয়ে যাবো। কিন্তু এটা মোটেই ঠিক ধারণা নয়। প্রতিটি মানুষেরই তার খাবার সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সচেতন থাকা উচিত। বর্তমানে বেশির ভাগ খাবারেরই প্রচুর ভেজাল। আগের যুগের মানুষেরা বয়স হওয়ার পরেও যতটা সুস্থ থাকতো, আধুনিক যুগের মানুষেরা ভেজাল খাবার খেয়ে অনেক দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। খাদ্যের তালিকার দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত। সুস্থ থাকার জন্য খাবারের গুনগত মানের দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। মানুষকে সবসময় সুষম খাবার খাওয়ার দীর্ঘমেয়াদী উপকারিতা সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে।
দিন দিন খাবারের মধ্যে ফরমালিনের হার বেড়েই যাচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এখন হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে। কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। কিন্তু বর্তমানে বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই ফরমালিন থাকে ৷ যেটার ফলে মানুষের শরীরে একসময় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতিরিক্ত ফরমালিন যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে মানুষের শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। পাকস্থলীতে এবং লিভারে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। সেইসাথে মানুষের দৈহিক বিকাশেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে।
মাছে ফরমালিন চেনার কতগুলো উপায় আছে। যেমন-
১. অনেক সময় ফরমালিন মেশানো পানিতে মাছকে ডুবিয়ে রাখা হয়। অনেক দিন আগে আনা মাছ ফরমালিন যুক্ত পানিতে রাখার কারণে মাছ শক্ত থাকে যার কারণে সাধারণ মানুষের ভাবে মাছ মনে হয় তাজা।
২. মাছের ফুলকাগুলো ধূসর রঙের হয়ে থাকে।
৩. মাছের আঁশ ধূসর রঙের হয়ে থাকে যেখানে মাছের আঁশ উজ্জ্বল রঙের হওয়ার কথা।
৪. মাছের চোখ দেখতে ঘোলাটে দেখা যায়।
শুধু মাছ নয়, ফল, শাক-সবজিতেও প্রচুর পরিমাণে ফরমালিন মেশানো হয়ে থাকে। মানুষেরা এই বিষয়ে সচেতনা না হওয়ার ফলে নিজেদের বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। খাওয়ার সময় ফরমালিন যুক্ত খাবারে একটা অন্য রকম গন্ধ পাওয়া যায়। একটু ভালো মতো খেয়াল করলেই জিনিসগুলো নজরে আসে।
শুধু যে মাছেই ফরমালিন মেশানো হয় এমনটা না। মাংসের মধ্যে বর্তমানে অনেক ভেজাল থাকে। ফার্মের মুরগীর ওজন দ্রুত বাড়ানোর জন্য এমন কিছু খাবার মুরগীকে খাওয়ানো হয়ে থাকে যেটা মুরগির ওজনকে অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং মানুষের স্বাস্থ্যর প্রতি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে। যার কারণে মুরগী কেনার ব্যাপারেও মানুষকে সচেতন হতে হবে।
ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে রক্তের স্তরে পিএইচ লেভেল বজায় থাকে না, হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নির্গত হতেও সমস্যা দেখা দেয়, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হাড়-সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। অতএব, ভালো নির্ভেজাল শাকসবজি খাওয়া অভ্যাস গরে তুলতে হবে। বেশিরভাগ সবুজ সবজি ক্ষারীয় প্রকৃতির এবং শরীরকে সঠিক পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চিনি এড়ানো আরেকটি বিষয় যা আমাদের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। চিনিতে অর্ধেক গ্লুকোজ এবং অর্ধেক ফ্রুক্টোজ থাকে। গ্লুকোজের বিপরীতে, শরীরের সমস্ত কোষ ফ্রুক্টোজকে বিপাক করতে পারে না। এটি কেবল লিভার যা ফ্রুক্টোজকে বিপাক করতে পারে, তাও সীমিত আকারে এবং এটি গ্লাইকোজেন হিসাবে সংরক্ষণ করে। যখন অতিরিক্ত ফ্রুক্টোজ গ্লাইকোজেন প্যাকড লিভারে প্রবেশ করে, তখন এটি আর কোথাও যেতে পারে না।
অতএব, নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন। শরীর ফিট থাকলে সুখের মুহূর্তগুলো আরো ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ