বিএনএ,চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও বাঁশখালীর মন্ত্রী-এমপিসহ আরো ৬২ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার ২০ আগস্ট সাতকানিয়া থানা ও বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক পৃথক এই দুই মামলা দায়ের করা হয়।
এর মধ্যে সাতকানিয়া থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের জনার কেঁওচিয়া গ্রামের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সরওয়ার জামাল। তিনি কেঁওচিয়া ইউনিয়ন এলডিপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।এই মামলায় আরো ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে।
মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর ছোট ভাই জসিম উদ্দীন, ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, বাজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত, কেঁওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান আলী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, তাঁর ছোট ভাই তৌহিদুল ইসলাম, সাতকানিয়া উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি আবু ছালেহ, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের সাবেক সভাপতি শফিউল আলম, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইউনুচ, সাধারণ সম্পাদক রিপন কান্তি দাশ, কেঁওচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওসমান গণি সিকদার, উত্তর সাতকানিয়া সাংগঠনিক থানা যুবলীগের সহসভাপতি শফিউল আজাদ চৌধুরী, ছদাহা ইউপির সাবেক সদস্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী সাইক্লোন শেল্টার ও আশপাশের এলাকায় এলডিপির সভাপতি ও সংসদ সদস্য প্রার্থী অলি আহমদের পক্ষে তাঁর ছেলে ওমর ফারুক নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় নজরুল ইসলাম চৌধুরী ও তাঁর ভাইয়ের নেতৃত্বে নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। এতে ওমর ফারুকসহ বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক গুরুতর আহত হন। হামলাকারী আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আহত ওমর ফারুকের কাছ থেকে টাকা, মুঠোফোন ও ব্যাংকের কার্ড ছিনিয়ে নিয়ে যান।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একটি দল কাজ শুরু করেছে।
এদিকে গুম, খুন, চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক নির্যাতনসহ এমন কোন অপকর্ম নাই যার সাথে জড়িত নাই বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের নাম। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে স্থানীয় রাজনীতির ছায়ায় গড়ে ওঠা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সহিংসতার একটি জঘন্য ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরসহ আটজনের বিরুদ্ধে জমি ও বাগান দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের মতো গুরুতর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল কালীপুর ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল হক বাঁশখালী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক আবদুল হামিদ বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলাটির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, অ্যাডভোকেট তকসিমুল গণি ইমন, অ্যাডভোকেট লুৎফুল হায়দার এবং অ্যাডভোকেট আবু নাছের।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বাঁশখালী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নির্দেশে এবং তার মদদে কালীপুর ইউনিয়নে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি এবং জমি ও বাগান দখল করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর এবং ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই আসামিরা নুরুল হকের লিচু বাগান জোরপূর্বক দখল করেন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমানের নির্দেশে আসামিরা নুরুল হকের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং তার বাড়িঘর ভাঙচুর করে।
এর আগে গত ২৯ জুন উপজেলা সদরে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্যে আবদুল গফুর কার্যালয় নির্মাণে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বিভিন্ন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে অভিযোগ করেন। পরদিন কয়েকটি গণমাধ্যমে গফুরের অভিযোগসংবলিত বক্তব্যটি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সাংবাদিক ছাড়াও একই ঘটনায় মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল গফুরের ‘হাড্ডি’ ভেঙে ফেলবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। মুঠোফোনে আবদুল গফুরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগও উঠেছে। মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি পৌর সদরে নির্মাণ করা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর এই কার্যালয় নির্মাণ শুরু হয়। এক বছর আগে কার্যালয়টির উদ্বোধন করা হয়। কার্যালয় করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নেন বলে মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
উল্লেখ্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। অবশ্য ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে। এর আগে বাঁশখালী থানা কার্যালয়ে হাজির হয়ে মোস্তাফিজুর ওসি তোফায়েল আহমদের দিকে তেড়ে যান। এ কারণে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে মুজিবুর রহমান ৫৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন। মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এ ছাড়া প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করেও সমালোচিত হন তিনি।
বিএনএনিউজ/নাবিদ/এইচ.এম/হাসনা