বিএনএ,চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, পটিয়া, আনোয়ারা এলাকার সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী সিণ্ডিকেটের মূলহোতা একাধিক ছিনতাই মামলার আসামি মো. সোহেলসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ৭২ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে ১৯ আগস্ট নগরীর কর্ণফুলী থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো টিপছোরা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা ৫ নং ওয়ার্ডের মরিচ বেপারির বাড়ির মো. ইউসুফের ছেলে মো. সোহেল (২৫), চরলক্ষ্যার গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডের বানুর বাপের বাড়ির বাদশাহর ভাড়াটিয়া সেলিমের ছেলে সাহাব উদ্দিন(২২) ও চরপাথরঘাটা ২নং ওয়ার্ডের তোতার বাপের হাট শেখ বাড়ির জিয়াবুল হোসেনের ছেলে জুয়েল হোসেন(২০)। এদের মধ্যে সোহেলের বিরুদ্ধে পটিয়া, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, সে টাকা ও দামি মোবাইল আছে এমন ব্যক্তিকে টার্গেট করে। ওই ব্যক্তি যে সিএনজি অটোরিকশায় ওঠে যাত্রী বেশে সে দুই/তিন জন নিয়ে সেই অটোরিকশায় ওঠে। পথিমধ্যে সুবিধা মতো এলাকায় গেলে ছোরা ধরে টাকা ও মোবাইল কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, গত ১৬ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টার দিকে আনোয়ার কাপড় ব্যবসায়ী জহির আহমদ চট্টগ্রাম শহর থেকে কাজ শেষে মইজ্যারটেক এলাকায় আসেন। সেখান থেকে আনোয়ারা চাতুরি চৌমুহনী যাওয়ার জন্য সিএনজি অটোরিকশায় ওঠেন তিনি। অটোরিকশায় আগে থেকে দুইজন যাত্রী ছিল। একটু যাওয়ার পর আরও দুইজন যাত্রী ওঠেন ওই অটোরিকশায়। তারা চালকের দুই পাশে বসে।
‘ফকিরনীরহাট রাস্তারমাথা অতিক্রম করার পর অটোরিকশার মাঝখানের সিটের বামপাশের একজন ব্যবসায়ী জহিরকে মাঝখানে দিয়ে জোরপূর্বক ডানপাশে গিয়ে বসেন। এর তাকে ধারালো ছোরার ভয় দেখিয়ে নগদ ৭০ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেন। তারা ওই অটোরিকশা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।’- বলেন ওসি।
এ ঘটনার পর ব্যবসায়ী জহির আহমদ বাদি হয়ে কর্ণফুলী থানা মামলা দায়ের করেন। এরপর গোপন সংবাদের ভিতিতে কর্ণফুলীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতা সোহেলসহ তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্ণফুলী থানার এসআই মো. আবু বকর বলেন, গোপন সংবাদের ভিতিতে অভিযান চালিয়ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৭ আগস্ট রাতে জুয়েলকে মইজ্যারটেক এলাকা থেকে, ১৮ আগস্ট শাহাব উদ্দিনকে চরলক্ষ্যা থেকে ও ১৯ আগস্ট সোহেলকে শিকলবাহা ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে ২০২০ সালে ২৬ জুলাই রাতে আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন এলাকায় একই কায়দায় ছিনতাই করার সময় জনতার হাতে আটক হয়েছিল সোহেলসহ তিন ছিনতাইকারী। ওই সময় গণপিটুনি দিয়ে তাদের আনোয়ারা থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
চলতি বছরের ১৫ জুন রাত ৯টার দিকে পটিয়া থানাধীন ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশে বালুরটাল এলাকায় থানামহিরা গ্রামের সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৭ হাজার ৬৬৮টাকা ও একটি বাইসাইকেল ছিনিয়ে নেয় সোহেল ও মফিজ নামে দুই ছিনতাইকারী। এঘটনায় পটিয়া থানায় অভিযো দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরের ২১ মে রাতে পটিয়া থানার শান্তিরহাট চালের দোকান বন্ধ করে টাকা নিয়ে সিএনজি অটোরিকশাযোগে শিকলবাহা ৫ নং ওয়ার্ডস্থ বাড়িতে ফিরছিল চাল ব্যবসায়ী লোকমান। একই কায়দায় পথিমধ্যে ভেল্লাপাড়া এলাকায় তার কাছ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা।
ব্যবসায়ী লোকমান ও মো. সোহেল একই এলাকার একবাড়ির বাসিন্দা হওয়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় সোহেলকে সন্দেহ করা হয়। ওইদিন রাতে সোহেলকে ধরার জন্য তার বাড়িতে অভিযান চালায় কর্ণফুলী থানা পুলিশ। এঘটনা পর লোকমানের বড় ভাই চাক্তাই এলাকার চাল ব্যবসায়ী হাজী মো. ওসমান গনিকে মুঠোফোনে ছুরিকাঘাতে হত্যার হুমকি দেয় সোহেল। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় জিডি করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ২৪.কম/এনএএম