21 C
আবহাওয়া
৪:২৬ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সুতোয় গাঁথা

১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সুতোয় গাঁথা

বিশেষ সম্পাদকীয় পড়ুন

।।মিজানুর রহমান মজুমদার।।

২১ আগস্ট ২০০৪ সাল। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরও একটি ভয়াবহ কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে আরেক মর্মন্তুদ কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট একই সুতোয় গাঁথা। ব্যবধান শুধু সময়ের।
বিএনপি ও জামায়াত এর যৌথ পরিকল্পনায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান গোষ্ঠীকে দিয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আল্লাহর অসীম রহমেত অলৌকিকভাবে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ ওইদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেদিন যদি ঘাতকদের নিক্ষিপ্ত গ্রেনেড সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত ট্রাকে বিস্ফোরিত হতো তবে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কোনো সিনিয়র নেতাই প্রাণে রক্ষা পেতেন না। আর এটিই ছিল ঘাতকচক্রের মূল পরিকল্পনা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা থেকে নেতাকর্মীরা মানবঢাল তৈরি করে আওয়ামী লীগ সভাপতিকে বাঁচাতে গিয়ে মহিলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি আইভী রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীসহ ২৪ জন নেতাকর্মী এই ভয়াবহ, নৃশংস, নিষ্ঠুর-নির্মম গ্রেনেড হামলায় মারা যান। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দুই কান ও চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপূরণীয় ক্ষতি হয় তার শ্রবণশক্তির। শেখ হাসিনা তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। বিএনপি সরকারের সন্ত্রাস-দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সেদিন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল।

তৎকালীন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের এক সঙ্গে হত্যা করার জন্য বিএনপি- জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় গ্রেনেড হামলার পরবর্তী ঘটনায়।
গ্রেনেড হামলার পরপরই শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে ঘেরাও করে নামিয়ে গাড়ির কাছে নিয়ে আসেন। আর তখনই গাড়ির সামনের জানালা লক্ষ্য করে পর পর অনেকগুলো গুলি ছোড়া হয়। এ সময় তাকে ঘেরাও করে রাখা আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী মাহবুব ঘটনাস্থলে মারা যান।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে না পারেন, তার সব চেষ্টায়ই করেছিল হামলাকারীরা। তার গাড়ির কাঁচে কমপক্ষে সাতটি বুলেটের আঘাতের দাগ, গ্রেনেড ছুড়ে মারার চিহ্ন এবং বুলেটের আঘাতে পাংচার হয়ে যাওয়া গাড়ির দুটি চাকা সে কথাই প্রমাণ করে। এটি ছিল একেবারে ঠান্ডামাথায় হত্যার পরিকল্পনা। তিন স্তরের বুলেট নিরোধক ব্যবস্থাসম্পন্ন মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটিই সেদিন শেখ হাসিনার প্রাণ বাঁচিয়েছেল।

গ্রেনেড আক্রমণ ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখহাসিনাকে হত্যার বিকল্প পন্থা হিসেবে বন্দুকধারীদের তৈরি রাখা হয়। বন্দুকধারীরাই খুব হিসাব কষে নেত্রীর গাড়ির কাঁচে গুলি চালায়। এই গুলি বুলেটপ্রুফ কাঁচ ভেদ করতে ব্যর্থ হলে তারা গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। কিন্তু এই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। এমনকি গাড়ির চাকা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় গুলির আঘাতে গাড়ির বাঁ পাশের সামনের ও পেছনের দুটি চাকা পুরোপুরি পাংচার হয়ে গেলেও চালক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সেই গাড়িটি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ধানমন্ডির সুধা সদনে নিয়ে যান।

বিএনপি-জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে চলা একমাত্র দল আওয়ামী লীগকে চিরদিনের জন্য নেতৃত্ব শুণ্য করে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্র তারেক জিয়া। তাদের সহযোগিতা করেন তত্কালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর মহাসচিব ও তত্কালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ।রাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক ব্যক্তিদের একটি অংশকে কাজে লাগান তৎকালীন বিএনপি জামায়াতের জোট সরকার। তাদের সবাইকে নিয়ে গুলশানের হাওয়া ভবনে গ্রেনেড পরিকল্পনা ও নীল নকশা চুড়ান্ত করেন তারেক জিয়া।

মানবতা বিরোধী জঘন্যতম এ ঘটনাটি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল সাজাতে ‘জজ মিয়া’ নাটক মঞ্চায়ন করেছে খালেদা জিয়ার তৎকালীন সরকার। সুষ্ঠু বিচার ব্যাহত করতে দমকল কর্মীদের দিয়ে পানি নিক্ষেপ করে নষ্ট করা হয়েছে আলামত। সেনাবাহিনীর উদ্ধার করা গ্রেনেড বিস্ফোরণে বাধ্য করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর চাকুরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে গ্রেনেড উদ্ধারকারি দলের নেতৃত্ব প্রদানকারি সেনাবাহিনী ক্যাপ্টেনকে।

১৪ বছর পর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর এ মামলার রায় হয়েছে। কিন্তু রায়ের বাস্তবায়ন হয়নি। আসামিদের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা মামলাটি। বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে একটি কথা প্রচলিত `Justice delayed is justice denied’. জাতি এমনটা প্রত্যাশা করেন না। জাতির প্রত্যাশা করে দ্রুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা প্রচেষ্টা এবং তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যার জঘন্যতম এ গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হয়।

Loading


শিরোনাম বিএনএ