বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারা- কর্ণফুলী উপজেলার রাজনীতি মূলত দুইটি পরিবারে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। দুই সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান কায়ছার ও আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু পরিবার। বর্তমানেও এই দুই পরিবারের প্রতিনিধিরা আনোয়ারার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তবে সেক্ষেত্রে বাবু পরিবার প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে একক বলয়ে রাজনীতি করেছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি। তবে এবারের দ্বাদশ সংসদে মন্ত্রী পরিষদ থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি। সেখানেই শেষ নয় তার বিপরীত মেরুতে এবার মন্ত্রীসভায় অর্থপ্রতিমন্ত্রী হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি। এদিকে তার মন্ত্রনালয়ে জায়গা হওয়ার পর আনোয়ারা কর্ণফুলীর রাজনীতিতে মেরুকরণ পাল্টে গেছে। একক বলয়ে রাজনীতি করার সুযোগ হারিয়েছে বাবু পরিবার।
দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র বলয়ে থাকা অনুসারিরা হঠাৎ দলবল নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক অর্থপ্রতিমন্ত্রী বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি’র গ্রুপে যোগদান করছেন। এই নিয়ে আনোয়ারা কর্ণফুলীর রাজনীতিতে নতুন করে মেরুকরণ শুরু হয়েছে।
তথ্য বলছে, আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বিগত মন্ত্রীসভায় ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। তাঁর পিতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু একাধিকবার সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ারা–কর্ণফুলীর রাজনীতিতে বাবু পরিবারের একক আধিপত্যে নিয়ন্ত্রণ চলে এসেছিলো। কিন্তু আনোয়ারার আরেক বর্ষীয়ান নেতা, আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থপ্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বদলে যেতে শুরু করে কর্ণফুলীর রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
এতদিন যারা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলয়ে উপেক্ষিত ও বঞ্চিত ছিলেন তাঁরা অর্থপ্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নামে সভা সমাবেশ করে নতুন ভাবে সংগঠিত হতে শুরু করেছে।
এতে শুরুতেই অর্থপ্রতিমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে প্রকাশ্যে আসেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ, কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শিকলবাহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সহ-সভাপতি এস. এম ছালেহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিউদ্দিন মাইজভান্ডারী, চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও জুলধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নুরুল হকসহ অনেকেই।
অপর দিকে আনোয়ারার রাজনীতির মধ্যে প্রকাশ্য আসে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আবুল কালাম চৌধুরী, আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল, হাইলধর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দীন বেশ কিছু নেতা। যাদের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী।
ইতিমধ্যে এরা কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেকে অর্থপ্রতিমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা, আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে ইফতার পার্টি ও দোয়া মাহফিল, বেড়িবাধঁ পরিদর্শন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শিকলবাহায় সাম্পান বাইচ ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ সর্বশেষ আনোয়ারা চাতরী চৌমুহনীতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ‘ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে গণজোয়ারে চমক সৃষ্টি করেন।
এতেই সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র একক সাম্রাজ্যে হঠাৎ ফাটল তৈরি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি।
এমনকি তখনই কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগে দলীয় কোন্দল নড়বড়ে হয়ে উঠে। দলে দলে উপজেলায় দীর্ঘদিন নিস্ক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা নৌকায় পাল তুলতে শুরু করে। একাধিক নেতা অর্থপ্রতিমন্ত্রীর হাতে ফুল দিয়ে তাঁর নেতৃত্বে কাজ করতে দলে দলে যোগদান অব্যাহত রাখেন।
গত কয়েকদিন আগে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন চৌধুরী নেভী, যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক সুমন মেম্বার, শিকলবাহা যুবলীগ নেতা বাহাদুর খাঁন, যুবলীগ নেতা আব্দুন নুর মেম্বার, যুবলীগ নেতা ফরিদ মেম্বার, যুব সংগঠক সাইফুদ্দিন মানিক মেম্বার, চরপাথরঘাটা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ উদ্দিন চৌধুরী ও কর্ণফুলী ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মো. সাইফুদ্দিনও যোগদান করেছেন।
এছাড়াও দক্ষিণ শিকলবাহা ৪ নং ওয়ার্ড থেকে আবু তালেব মেম্বার, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান মিটু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ পেয়ারু, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল রনি, মহিলা বিষয়ক হামিদা বেগম, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মো. রাজু হোসেন, সদস্য ওসমান, হানিফ, রাসেল, জাবেদ, বেলাল, ইউসুফ খোকন, ইউনুছ, শাহজাহান, মারুফ, আমিন, শামিম, মহসিন, সিদ্দিক, বাবু, টিটু, টিপু,ডালিম, ধনু প্রমূখ।
শিকলবাহা ৫ নং ওয়ার্ড থেকে মোহাম্মদ কায়সার মেম্বার, মো. সাইফু, মো. জামাল মিস্ত্রি, সালাউদ্দিন, মো. সাকিব, মো. হাসান, মো. বেলাল, মো. হারুন সওদাগর, মো. মোজাম্মেল, মো. সাগর, মো. সাজ্জাদ, মো. তৈয়ব, মো. মুছা, মো. বাবুল, মো. লেদু, মো. সোলাইমান প্রমূখ।
শিকলবাহা ৬ নং ওয়ার্ড থেকে মো. ইউসুফ, হায়দার কবির, সুমন নাথ, লক্ষ্মণ শীল, মোহাম্মদ সেলিম, মো. হারুন, মো. সজিব, আবুল কাসেম, মনোয়ার হোসেন, মো. সাইফুল, আলা উদ্দীন রনি, আরমান মুন্সি, জাহাঙ্গীর মুন্সি, রবিউল আলম প্রমূখ।
শিকলবাহা ৭ নং ওয়ার্ড থেকে মোহাম্মদ ফরিদ, মো. ওসমান মেম্বার, মো. জানে আলম, আহমেদ শরীফ, মো. মুছা, মো. আমজাদ, মো. আরমান, মো. রাসেল, মো. ইলিয়াস হোসেন, মোহাম্মদ মিনহাজ, মেজবাহ উদ্দিন, সিফাতসহ প্রমূখ। শিকলবাহা ৮ নং ওয়ার্ড থেকে মোহাম্মদ ইউনুস, মোহাম্মদ এমদাদ, ডাঃ ফোরকান আহমেদ, মো. তুহিন, মো. ইকবাল, মোহাম্মদ আরিফ, মোহাম্মদ তাহের, সুমন, খোকন ও বশরসহ শত শত নেতাকর্মীরা ওয়াসিকা গ্রুপে যোগদান করেছেন বলে একাধিক সুত্রে নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, এই দক্ষিণ শিকলবাহায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি’র একাধিক ভ্যানগার্ড হিসেবে চিহ্নিত উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন। কিন্তু এদের ডাকেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা সাড়া দিচ্ছেন না। কেননা, সাংগঠনিক ভাবে এখনো দক্ষিণ শিকলবাহা অনেকটা দুর্বল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন চৌধুরী নেভী বলেন, কর্ণফুলীতে হাইব্রিড নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দলটির বারটা বাজিয়েছেন। এতে হাইব্রিড নেতারাই ত্যাগীদের গলায় ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজের তকমা দিচ্ছেন। অথচ ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে কে কি কি করছে সেটা দেখার নেতা নেই। এজন্য বঞ্চিত তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলে দলে অর্থপ্রতিমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে নতুন ঠিকানা খুঁজে নিচ্ছেন।
বিএনএনিউজ২৪ডটকম ।এইচমুন্নী