বিএনএ, ডেস্ক : মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনের পরও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ফ্লপ এবং নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল –বিএনপি। উল্টো জেল ও মামলায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা। ফলে দেশের ঐতিহ্যবাহি রাজনৈতিক দল বিএনপির মধ্যে নানারকম অবিশ্বাস এবং সন্দেহ প্রবল আকার ধারণ করেছে।
বিএনপি নেতারা এখন নিজেদের সংগঠনের অন্য নেতাকেই বিশ্বাস করছেন না। এক নেতা আরেক নেতাকে অবিশ্বাস করছেন। বিএনপির সাবেক আইনমন্ত্রী শাহজাহান ওমর, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের সঙ্গী কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল সৈয়দ ইব্রাহিমের মতো পরীক্ষিত নেতা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। বিএনপির আরেক সাবেক মন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ নিজেই দলগঠন করে বিরোধী দলীয় নেতা হতে চেয়েছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত বেটে বলে হয়নি। সবমিলিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের অবিশ্বাস আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিএনপির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন, বিভিন্ন সময় বিএনপির জন্য বন্ধু হিসেবে এসে অনেকে বিএনপিকে ধোঁকা দিয়েছে এবং এই ধোঁকার তালিকা অনেক দীর্ঘ। বিএনপির মধ্যে থেকে অনেকে বিএনপির বন্ধু সেজেছেন, শুভাকাঙ্ক্ষী হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তারা সরকারের সঙ্গে গোপন আঁতাত করেছে এমন অভিযোগও বিএনপি নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে হরহামেশাই করা হয়।
বিএনপির একাধিক নেতার মতে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন ছিল একটি ধোঁকা। সে সময় ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসে বিএনপিকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়েছেন! শুধু তাই নয়, তাদের প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীও ছিলেন সরকারের এজেন্ট এবং বিএনপিকে বিভক্ত করার মিশন নিয়ে তিনি এসেছিলেন, এমনটাই মনে করেন অনেক নেতা !
বিএনপি এখন যাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলন করছে সেই সমস্ত দলের অনেক নেতাকেই বিএনপি নেতারা সন্দেহ ও অবিশ্বাস করে। তবে এই অবিশ্বাসের তালিকায় এখন সবচেয়ে বড় বিস্ময় হিসেবে যে নামটি সামনে এসেছে সেটি হল এলডিপির চেয়ারম্যান কর্ণেল অবসরপ্রাপ্ত অলি আহমেদ। বিএনপির সাবেক মন্ত্রী কর্ণেল অলি আহমেদ বেগম খালেদা জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে দলে বেশ প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। শুধু বেগম খালেদা জিয়া নয়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের তিনি বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন । জিয়াউর রহমানের আহবানে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন।
কিন্তু সেই কর্ণেল অলি আহমেদের এখনকার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঘোরতর সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, বিএনপি ভাঙার জন্য নতুন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সরকার মাঠে নামিয়েছে কর্নেল অলি আহমেদকে।
এই ধরনের ভাবনার সূত্রপাত হয়েছে ২০ এপ্রিল একটি বক্তব্য থেকে। কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। সেই অনুষ্ঠানে কর্নেল অলি আহমেদ বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে বিএনপির নেতৃবৃন্দ বিস্মিত। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, এক সময় প্রয়াত ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেভাবে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপিকে বিতর্কিত করেছিলেন এখন কর্নেল অলি আহমেদ সেই কাজ শুরু করেছেন।
কর্ণেল অলি আহমেদ ওই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার যে অসুস্থতা তার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আর এজন্য যদি সরকার কোন আলাপ-আলোচনা করতে চায় সেই আলাপ-আলোচনায় যেতে প্রস্তুত বলে দাবি করেন সাবেক এই বিএনপি নেতা। এই বক্তব্যটি বিএনপির মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।
বিএনপির নেতারা বলতে শুরু করেছেন, কর্ণেল অলি আহমেদ বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকারের সঙ্গে দর কষাকষি বা আলোচনায় যাবার কে? তিনি তো বিএনপির কোনো নেতা নন।
বিভিন্ন বিএনপি নেতা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্পর্শকাতর অনুভূতি রয়েছে এবং সেই অনুভূতিকে ব্যবহার করে দলের নেতা কর্মীদের বিভ্রান্ত করা এবং দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির লক্ষ্যেই কর্নেল অলি আহমেদ এই ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন। কারণ বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির একটি সংলাপ দরকার।
বিএনপির অনেক নেতাই বিশ্বাস করেন যে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে যে সংলাপে যাওয়া হয়েছিল, সেই সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ছিল। এমনকি এবারের নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিনিময়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করা যেত বলেও অনেকেই মনে করেন।
কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সম্পূর্ণ এই মতের বিরুদ্ধে। তিনি বেগম জিয়ার বিষয়ে কোন রকম সংলাপ বা আলোচনার পক্ষপাতি নন। শুধু তাই নয়, তার মামা শামীম ইস্কান্দার যে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এটিও তারেক জিয়ার পছন্দের বিষয় নয় বলেই জানা গেছে। আর এ কারণে মামা ভাগ্নের মধ্যে এখন কথোপকথনও বন্ধ।
এরকম বাস্তবতায় কর্ণেল অলি আহমেদ যখন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সংলাপের কথা বলেছেন, তা বিএনপির অবস্থানের মৌলিক বিরোধী। সেকারণে এখন বিএনপি এলডিপি চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল, ড. অলি আহমেদকে এড়িয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি ও দল গোছানোর কর্মসূচী নিচ্ছেন।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী