24 C
আবহাওয়া
১০:০৪ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » মন্ত্রীর শ্যালকের ‘ধরাকে সরা’ জ্ঞান!

মন্ত্রীর শ্যালকের ‘ধরাকে সরা’ জ্ঞান!


বিএনএ, ডেস্ক :  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভদ্র ও ক্লিন হিসাবে সারাদেশে পরিচিত। তার বিভিন্ন কর্মসূচী বর্তমান সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। মেধা ও প্রজ্ঞার অধিকারি কম বয়সী এই নেতার এলাকায় রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সুনাম। অথচ, শ্যালক সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুল হাবীব রুবেল ঠিক তার উল্টো। একজন শিক্ষক হয়েও উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

YouTube player

এমন প্রেক্ষাপটে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দীর্ঘদিনের অর্জন ও সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে বিব্রত হয়েছেন তিনি। শ্যালক রুবেলের ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করার ঘটনায় ছাড় দেননি জুনাইদ আহমেদ পলক। শ্যালক রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যালক অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবীব রুবেল নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অপর চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় উপজেলা চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এখন আম ছালা দুটোই হারিয়েছেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যানকে অপহরণের ঘটনায় খোদ প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী- এমপি’র স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা না করার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন।

তারই ধরাবাহিকতায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন পাশাকে অপহরণ ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবীব রুবেলকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ। শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ জরুরি সভা ডাকা হয়।

সভা থেকে সভাপতি ওহিদুর রহমান শেখ ফোন করে অধ্যক্ষ লুৎফুল হাবীব রুবেলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয় সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলকে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে দুইএক দিনের মধ্যে তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওহিদুর রহমান শেখ।

সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌসের সঞ্চালনায় জরুরি সভায় বক্তব্য দেন সহসভাপতি অধ্যাপক মকবুল হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ মোল্লা, জাহেদুল ইসলাম ভোলা, সদস্য মিনহাজ উদ্দিন, সদস্য বিশ্বনাথ দাস কাশিনাথ, ডাহিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল মজিদ মামুন, কলম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুন্সি, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ডালিম আহমেদ ডন, সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান আহমেদ হাসান, পৌর যুবলীগের সভাপতি জনি হাসান লাবু প্রমুখ।

এ দিকে নাটোরে জেলা নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেন, তার ভাই ও এক নেতাকে অপহরণের ঘটনায় আতাউর রহমান কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসসহ প্রচুর দেশীয় অস্ত্র । গ্রেপ্তারকৃত আসামি ৪৫ বছর বয়সী মো. আতাউর রহমান সিংড়া উপজেলার চকপুর গ্রামের মৃত রবিউল্লাহ প্রামানিকের ছেলে।

শনিবার সিংড়া উপজেলা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সন্ধ্যা ৭টায় নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়।

ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান. গত ১৫ এপ্রিল সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য দেলোয়ার হোসেন ব্যাংকে জামানতের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বের হন। এ সময় তারা জরুরি প্রয়োজনে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে গেলে অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জন একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস যোগে জোর পূর্বক অপহরণ করে নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ভিকটিমের ভাই মজিবর রহমান নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে বিকেলে সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রামে দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে তাকে ফেলে দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এই পর্যন্ত তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত আসামির তথ্যে অপহরণ কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি আসামির বাড়ির গ্যারেজ থেকে জব্দ করা হয়। এ সময় গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২টি চায়না চাপাতি, ১টি চায়না টিপ চাকু, ১টি বার্মিজ কাটার, ২টি দেশীয় রামদা, ২টি স্টিলের পাইপ, ২টি ক্রিকেট স্ট্যাম্প , ১টি দেশীয় তৈরি চাপাতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. রুবেল হোসেনের অসংখ্য লিফলেট, স্টিকার, ক্যালেন্ডার সম্বলিত পোস্টার ছবি উদ্ধার করা হয়।
এর আগে লুৎফুল হাবীব রুবেলের ইশারায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের কথা স্বীকার করে ১৬ এপ্রিল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই ঘটনায় আটক দুই ব্যক্তি। এরপর ১৭ই এপ্রিল লুৎফুল হাবীবের প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে অপহরণের শিকার প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে মুনায়েম হোসেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই নির্বাচন কমিশনের উপসচিব আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে প্রার্থী লুৎফুল হাবীব রুবেলকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগে তার প্রার্থীতা কেন বাতিল করা হবে না তার জবাব চেয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপস্থিত হয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার ভাইসহ তিনজনকে অপহরণের সংবাদ ইসির নজরে এসেছে। এ ঘটনায় চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীবকে দায়ী করেছেন অপর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত অপহরণের ফুটেজ এবং স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে।

বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ