30 C
আবহাওয়া
১২:৫১ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গান ও কবিতায় একুশ

গান ও কবিতায় একুশ

গান ও কবিতায় একুশ

।। ওসমান গনী।। 

 

মহান একুশে ফেব্রুয়ারী  নিয়ে  অনেক গান ও কবিতা রচিত হয়েছে । একুশের রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছিল ঢাকায় অথচ কবিতার ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে তার অনুরণন উঠেছিল চট্টগ্রামে। সেই দিনই রচিত হয়েছিল মাহবুব-উল-আলম চৌধূরীর দীর্ঘ কবিতা কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। তার কিছুটা উল্লেখ করছি এখানে-
এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে
রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার নিচে
যেখানে আগুনের ফুলকীর মতো
এখানে-ওখানে জ্বলছে রক্তের আল্পনা,
সেখানে আমি কাঁদতে আসিনি।
আজ আমি শোকে বিহ্বল নই,
আজ আমি ক্রোধে উন্মত্ত নই,
আমি আজ রক্তের গৌরবে অতিষিক্ত।…

একুশের ঘটনা একজন কবিকে কীভাবে আলোড়িত করেছিল,  সে আবেগ যে কত তীব্র, বিধ্বস্ত ও উত্তপ্ত ছিল তা অনুভব করতে পারি  শামসুর রাহমান-এর কবিতা পাঠ করে।
আর যেন না দেখি কার্তিকের চাঁদ কিংবা
পৃথিবীর কোনো হীরার সকাল,
কোনোদিন আর যেন আমার চোখের কিনারে
আকাশের প্রতিভা, সন্ধ্যানদীর অভিজ্ঞ আর
রাত্রি রহস্যের গাঢ় ভাষা কেঁপে না ওঠে,
কেঁপে না ওঠে পৃথিবীর দীপ্তমান দিগন্তের তারা।

হাসান হাফিজুর রহমান তাঁর কবিতায় উল্লেখ করেন—
ঘুরে ঘুরে জাগবে ডাকবে,
দুটি ঠোঁটের ভেতর থেকে মুক্তোর মতো গড়িয়ে এসে
একবারও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে না, সারাটি জীবনেও না?
কি করে এই গুরুভার সইবে তুমি, কতোদিন?
বিশাল শরীর বালক, মধুর স্টলের ছাদ ছুঁয়ে হাঁটতো যে

আলাউদ্দিন আল আজাদের ভাষায়,
স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো।…
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক। ভয় কি বন্ধু, দেখ একবার আমরা জাগরী
চার কোটি পরিবার।
শুধু শহীদ মিনার নয়, যাদের স্মৃতিতে সেই মিনার, তাদের মৃত্যুকে মহিমাময় করেছেন আজাদ। যে মৃত্যুতে স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে ওঠে, রচিত হয় কবিতা, বাঁধা হয় গান, সে মৃত্যু অমরতার অপর নাম, তার প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন,
এ কোন মৃত্যু? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
শিয়রে যাহার ওঠে না কান্না, ঝরে না অশ্র“?
হিমালয় থেকে সাগর অবধি সহসা বরং
সকল বেদনা হয়ে ওঠে এক পতাকার রং
এ কোন মৃত্যু? কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন,
বিরহে যেখানে নেই হাহাকার?

একুশের কবিতা রচিত হয়েছিল তাৎক্ষণিক আবেগে কিন্তু প্রয়োজন ছিল গানেরও, তাই একটি কবিতা গান হয়ে উঠেছিল। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর কবিতা আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একটি কবিতা হিসেবেই রচনা করেছিলেন যা আবৃত্তি করা হয়েছিল গেণ্ডারিয়া ধূপখোলা মাঠে যুবলীগের এক উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে। আবদুল লতিফের সুরে ওই কবিতা প্রথম গান হয়ে ওঠে আবদুল লতিফ ও আতিকুল ইসলামের কণ্ঠে। তিপ্পান্ন সালের একুশে ফেব্র“য়ারি শহীদ দিবসে ঢাকা কলেজের অনুষ্ঠানে ওই গান গেয়ে আর ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার তুলে আতিকুল ইসলাম এবং আরও কয়েকজন কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন। পরে আলতাফ মাহমুদ গানটি আবদুল লতিফের কাছ থেকে শিখে নেন এবং আরও পরে নতুন করে সুর করেন। এখন আলতাফ মাহমুদের সুরেই গানটি গীত হয়।

সিকান্দার আবু জাফর রচিত শেখ লুৎফর রহমান সুরারোপিত জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই জনতার সংগ্রাম চলবেই গানটির উদাহরণ যথেষ্ট। আমরা শামসুদ্দীন আহমদ রচিত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করলিরে গানটি উদ্ধৃত করছি,
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন করিলিরে বাঙালি
(তোরা) ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি।
ও বাঙালি…।
মা-ও কান্দে বাপ-ও কান্দে জোড়ের ভাই
বন্ধু বান্ধব কাইন্দা কয় হায়রে খেলার সাথী নাই
রে বাঙালি…।
ইংরেজ যুগে হাঁটুর নিচে চালাইতো গুলি
স্বাধীন দেশে ভাইয়ে ভাইয়ে, উড়ায় মাথার খুলি
রে বাঙালি…।
গুলি খাওয়া ছাত্রেরই লাশ কবরে না দেয়
সেই লাশের উপর পেট্রল দিয়া হায়রে আগুনে পোড়ায়
রে বাঙালি…।
গুলি খাওয়া বাঙালির রুহ কাইন্দা কাইন্দা কয়
তোমরা বাঙালি মা ডাকিয়ো আমার
জনম দুঃখী মায়েরে।

বিএনএ/

Loading


শিরোনাম বিএনএ