27 C
আবহাওয়া
১০:১৪ পূর্বাহ্ণ - এপ্রিল ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আশুগঞ্জে ধানের বাজার চড়া, হতাশায় মিল মালিকরা

আশুগঞ্জে ধানের বাজার চড়া, হতাশায় মিল মালিকরা


।।গোলাম সারোয়ার।।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেঘনার তীরবর্তী আশুগঞ্জ ধান চালের বাজারটি ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারণায় প্রতিদিন অনেকটাই মুখরিত থাকে। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্য পেয়ে অনেকটাই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে বাজারে ধানের ক্রয় মূল্যের সাথে চালের বিক্রয় মূল্যের ফারাক থাকায় অনেকটা হতাশা প্রকাশ করেছেন ধান ব্যাপারী ও মিল মালিকেরা। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, যথা সময়ে ধান-চালের ক্রয় অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধান চালের হাটে প্রতিদিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিপুল পরিমাণ ধান আসে। এতে করে প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকেই বাজারটি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। বর্তমানে বাজারে চিকন ধান হিসেবে পরিচিত বিআর-২৮ ধান এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা এবং বিআর-২৯ ধান এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা এবং মোটা ইরি ধান বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১২০ টাকা থেকে এক হাজার ১৫০ টাকা দরে। চলতি মৌসুমে ধানের ন্যায্য দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকেরা।
আবুল কাসেম নামে আশুগঞ্জ সদর উপজেলার এক কৃষক বলেন, আগে ধানের দাম একটু কম ছিল এবছর দাম একটু ভালো। আমাদের ধানের দর বাড়িয়ে দিলে আগামীতে আরও বেশি ধান করবো।
অপর কৃষক দুলাল মিয়া বলেন, শুকনা ধান হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। যদি এই দাম থাকে তাহলে কৃষকদের জীবন বাঁচবে। আর ধানের দাম কমে গেলে কৃষকদের অনেক ক্ষতি হবে।  তিনি বলেন, কামলাদের টাকা দিয়ে বেশি একটা লাভ হয় না। তাই আমরা চাই এমন দাম যেন সব সময় থাকে।
এদিকে গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ধান ক্রয় করে ব্যাপারীরা ধানের বাজারে এসে মিল মালিকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে ধান বিক্রি করতে পারছেন না। অপরদিকে মিল মালিকেরা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা।
বাজারে ধান নিয়ে আসা ইদন মিয়া নামে এক ব্যাপারী বলেন, বিআর-২৯ ধান এক হাজার ৩০০ টাকা দরে কিনে আনছি। এখন বাজারে বিক্রি করতে হয় এক হাজার ২২০ টাকা দরে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ায় আবার হঠাৎ করে কমিয়ে দেয়। বাজারে ধানের দাম বাড়বে আমরা তো এই আশায় ধান কিনেছি। কিন্তু বাজারে এসে বেশি দাম পাই না। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ ধান কিনে বিক্রি করছি সবদিকেই লোকসান হয়েছে। আর মোকামে গেলে কৃষকেরা কম দামে ধান বিক্রি করে না।
ইসমাইল উদ্দিন নামে আরেক ব্যাপারী বলেন, বিআর-২৯ ধান এক হাজার ৪২০ টাকা দরে কিনছি। এখানে বিক্রি করতে হয় এক হাজার ৩৭০ টাকা দরে। প্রতিমণে ৫০ টাকা করে লোকসান হচ্ছে। আমরাতো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। প্রতি বছরই ব্যবসায় এভাবে লোকসান দিতে হয় আমাদের। তারপরও এই ব্যবসা করতে হয় তাই করছি।
মিল মালিক জয়নাল বলেন, ধানের দাম বাড়তি। ধান থেকে চাল করে লাভ হয় না। তাই ১৬ আনা থেকে ১২ আনা মিল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকীগুলো কোনো রকমভাবে টিকে আছে। যেভাবে ধান কিনছি আমরা ধানের আর চালের দামে পর্যায় পরছে না। ধান থেকে চাল তৈরি করে বিক্রি করতে গিয়ে চালের দাম অনেক কমে যায়। আমরা যারা মিলার তাদের কোনোদিকেই হিসেব মিলে না। পুরান ধানের দাম বেশি। যদি এটা সীমিত থাকতো তাহলে আমরা মিল চালাতে পারতাম।
আবু বক্কর নামে আরেক মিল মালিক বলেন, বিআর ২৯ চালের মধ্যে খরচ হয় দুই হাজার ৪০০ টাকা কিন্তু দুই হাজার ২৭০ টাকার বেশি বিক্রি করা যায় না। প্রতিমণে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ক্ষতি হয়। মিল মালিকেরা অনেক টাকা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করছে। এভাবে যদি লোকসান হয় তাহলে ব্যাংকের লোন দেওয়া সম্ভব হবে না। ধান চালের বাজারকে চাঙ্গা করতে হলে ভারত সহ বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধ করতে হবে।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীরনাথ চৌধুরী জানান, এ বছর এক হাজার ৮০ টাকা মণ দরে দুই হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হবে। একই ভাবে ৪০ টাকা দরে ১৪ হাজার ৪২০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে ক্রয় অভিযান চলছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযান চলবে। আশা করছি এরমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
বিএনএ/ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ