বিএনএ,চট্টগ্রাম: নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিশ্বের সেরা ১০০ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫৮ থেকে ৩০ এ আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটোরিয়ামে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪তম উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং করার জন্য যে সকল ইক্যুইপমেন্ট দরকার সংগ্রহ করছি। বন্দর চালু রাখতে গেলে ড্রেজিং করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু আছে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১৯ সালে আমরা কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এ ছিলাম ৬৩ তম এবং চলতি বছরে এসেছি ৫৮ তম স্থানে। এখন বিশ্বের সেরা ১০০ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরকে ৫৮ থেকে ৩০ এ আনার লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা সবাই।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পোর্ট লিমিট বাড়ানো হয়েছে। এটি মাতারবাড়ি ও মিরসরাই পর্যন্ত চলে গেছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে। পিটিসি (পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল) ২০২১ সালে চালু করতে যাচ্ছি। আমাদের নতুন নতুন বেসরকারি ইয়ার্ড তৈরি হচ্ছে। এখানে বিনিয়োগ বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগও আসতেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে, দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রে বন্দর, নদী, সমুদ্রকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেবে সরকার। কিন্তু বিনা অভিজ্ঞতায় চাকরি হবে না। দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। অদক্ষ মানুষকে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব দিতে চাই না।
খালিদ মাহমুদ বলেন, করোনা মহামারিতে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখেছেন। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে লেখা থাকবে। আপনারা নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। আপনারা বন্দর সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে এনবিআর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো জনগণের জন্য উন্নয়নে ব্যবস্থা নেবে। বন্দরের হাসপাতাল আধুনিকায়ন করা হবে। বন্দর স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের রূপ দেওয়া হবে।
সভায় জুম অ্যাপে সভায় অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, লালদিয়া টার্মিনালের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার। ওখানে যারা বসতি স্থাপন করেছে ওদেরকে স্থানান্তর করতে হবে। এতে বন্দরের সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, আজকের সভায় আমি দুইটি প্রস্তাব উপস্থাপন করব। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বে-টার্মিনাল। বে-টার্মিনাল প্রকল্পকে ফাস্ট টেক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন। এতে বন্দেরর উপর চাপ কমবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বে-টার্মিনালের অধীনে পোর্ট নির্মাণ করা। তথ্যমন্ত্রী বলেন, বে-টার্মিনাল থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর হচ্ছে। এই শিল্প নগরের মাঝ পথে আরেকটি বন্দর প্রয়োজন আছে কিনা। এতে করে ওই নগরের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা পোর্ট করব দেশের স্বার্থে, কোন ইন্টারেস্ট গ্রুপের সাথে নয়। চট্টগ্রামে অনেকগুলো রেলের জায়গা পড়ে আছে, রেলের সাথে চুক্তি করে ওখানে টার্মিনাল করা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের যে স্টেডিয়াম আছে ওটাকে আন্তর্জাতিক মানের করা প্রয়োজন। এছাড়া বন্দর হাসপাতালের কিছু সিট বন্দরের অভ্যন্তরে জন্য বরাদ্দ রেখে আর কিছু সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের গাড়ির রেন্ট চার্জ কমিয়ে দেওয়া দরকার বা মংলা বন্দরে গাড়ি চার্জ বাড়িয়ে দেওয়া প্রয়োজন। এতে গাড়ির আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করবে। আর পায়রা বন্দর চালু হলো প্রধান থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর।
সিন্ডিকেটের কারণে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না-সুজন
সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সোনার রাজহাঁস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। আর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই বন্দর সচল রাখা প্রয়োজন। এই বন্দরের কারণ হচ্ছে এ শহরে। এই শহর যদি না চলে বন্দরকে বাঁচানো কষ্টকর হয়ে যাবে। তাই একই ছাদে আমাদের কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, বে-টার্মিনাল বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটকে বের করার ব্যবস্থা ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এদের কারণে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।
সুজন বলেন, বন্দরে আসা ট্রাক, টেইলরগুলোর জন্য অপেক্ষমান টার্মিনাল করা প্রয়োজন। এতে করে শহরের উপর কিছুটা চাপ কমবে।
বন্দরের সদস্য মো. জাফর আলমের সঞ্চলনায় সভায় ১৩তম সভার সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ।
উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, ওয়াসিকা আয়েশা খান, কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একেএম আলতাফ হোসেন, নুরুল কাইয়ুম খান, বিজিএমইএর নাসিরুদ্দিন চৌধুরী, সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, নুরুল হক প্রমুখ।
এছাড়া সভায় উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
জুম অ্যাপে সভায় অংশ নেন এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিকেএমইএর মো. হাতেম, রেজাউল করিম, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ প্রমুখ।
বিএনএনিউজ/মনির