বিএনএ ডেস্ক : গত ২৬ অক্টোবর দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সাপ্তাহিক রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’—এ নেপথ্যের গল্পে ‘ উনি তো কিছু বলে গেলেন না’—– শিরোনামে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি করেন মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’
এরপরই শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে দেশ-বিদেশের নানা পত্রিকায় এ বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সব বিচারপতি মিলে ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে মতামত দেন, রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সবার ধারণা ছিল সুপ্রীম কোর্টের ১০৬ ধারার রেফারেন্সের ভিত্তিতে ৮ আগষ্ট রাতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়েছে ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পর হওয়ার পর গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ১০৬ ধারার এই স্পেশাল রেফারেন্সকে ‘ভূয়া’ বলে দাবি করেছেন, সিনিয়র আইনজীবী মহসিন রশিদ। তিন সপ্তাহ আগে, আইন উপদেষ্টা, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে নোটিশ দিয়ে ১০৬ ধারার রেফারেন্সের কপি চেয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু কেউ সাড়া দেননি। ফলে সুপ্রিম কোর্টের ১০৬ ধারার স্পেশাল রেফারেন্স কপি উপস্থাপনের জন্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করেছেন এই আইনজীবী।
আইনজীবী মহসিন রশিদ অভিযোগ করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান সংরক্ষণ করার জন্য শপথ নিলেও তিনি সংবিধান মানছেন না।
আইনজীবী মহসিন রশিদ আরও বলেন, আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের বিচারক ফরাহ মাহবুবের কোর্টে দায়ের করা রিট পিটিশনটির শুনানি করবেন। সেখানে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে ১০৬ ধারার স্পেশাল রেফারেন্সের নথি উপস্থাপন করতে না পারলে ফৌজধারী মামলা করবেন বলে জানান এই রিট পিটিশনকারি।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৮ আগস্ট শপথ নেয়ার আগে সংবিধানের ১০৬ ধারা সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি ‘স্পেশাল রেফারেন্স’ রাষ্ট্রপতির কাছে উপস্থাপন করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত ওই রেফারেন্সে বলা হয়, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি ৬ আগস্ট দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান এর অনুচ্ছেদ ৪৮(৩) অনুসারে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের কথা তুলে রেফারেন্সে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করার বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে ৮ আগস্ট গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামত যাচনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের বক্তব্য শোনা হলো।
এতে আরো বলা হয়, এমতাবস্থায় সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কোনো বিধান না থাকায় উল্লিখিত প্রশ্নের বিষয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত উপদেষ্টামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই মতামত প্রদান করছে যে, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণে জরুরি প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের নির্বাহী কার্য পরিচালনার নিমিত্তে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টা নিযুক্ত করতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতি উক্তরূপে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাদেরকে শপথ পাঠ করাতে পারবেন বলেও ওই রেফারেন্সে বলা হয়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ পত্র রাষ্ট্রপতির কাছে নেই এমন বির্তক শেষ না হতেই এবার ১০৬ ধারার সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্সকে আইনজীবী মহসিন রশীদ ভূয়া দাবি করার ঘটনায় সারাদেশে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সৈয়দ সাকিব