বিএনএ ডেস্ক: নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েদ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এটি ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত।
সিদ্ধিলাভের পর আষাঢ়ী থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাসের বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা উৎসব পালন করেন গৌতম বুদ্ধ। এরপর থেকেই বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে দিনটি ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হয়।
বৌদ্ধদের মতে, এ পুণ্যময় পূর্ণিমা তিথিতে মহামানব তথাগত গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন। মানবজাতির সুখ, শান্তি ও কল্যাণের লক্ষ্যে দিকে দিকে স্বধর্ম প্রচারের জন্য ভিক্ষু সংঘকে নির্দেশ দেন তিনি । একই দিনে তার তিন মাসের বর্ষাবাসের পরিসমাপ্তি ঘটে।
বৌদ্ধ ভিক্ষুগণ আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই তিন মাস বর্ষাব্রত পালন করেন। এই তিন মাস তারা বিহারে অবস্থান করেন। যেহেতু একসঙ্গে বসবাস করতে গেলে পরস্পরের মধ্যে ভুলভ্রান্তি হওয়া স্বাভাবিক, সেহেতু ভিক্ষুদের মধ্যেও ভুলভ্রান্তি হতে পারে। তাই বর্ষাব্রত পালন শেষে ভিক্ষুগণ আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে প্রবারণা করেন। অর্থাৎ এই দিনে ভিক্ষুগণ পরস্পরের কাছে তাদের পূর্বকৃত ভুলভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যার মাধ্যমে বুদ্ধের শাসনের উৎকর্ষ এবং ভিক্ষুসংঘের কল্যাণ সাধিত হয়। ভিক্ষুসংঘের বর্ষাবাস পরিসমাপ্তির এই পবিত্র দিনকে কেন্দ্র করেই প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করা হয়। প্রবারণা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য একটি আবশ্যক বিধিবদ্ধ নিয়ম।
প্রবারণা পূর্ণিমার এই দিনের আকর্ষণীয় একটি দিক হলো সন্ধ্যায় ফানুস ওড়ানোর উৎসব। আর সর্বস্তরের মানুষ এই উৎসব উপভোগ করে। ফানুস মূলত ওড়ানো হয় বুদ্ধের কেশ ধাতুর প্রতি পূজা ও সম্মান প্রদর্শনার্থে।
কথিত আছে, গৌতম বুদ্ধ গৃহ ত্যাগ করার পর ভাবলেন, তার কেশরাশি প্রব্রজিতের পক্ষে অন্তরায়। তাই তিনি কেশকলাপ কেটে রাজমুকুটসহ ঊর্ধ্বাকাশে নিক্ষেপ করেছিলেন। তাবতিংশ স্বর্গের দেবগণ তার কেশরাশি নিয়ে চুলমনি চৈত্য প্রতিষ্ঠা করে পূজা করতে লাগলেন। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই সশ্রদ্ধচিত্তে প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উড়িয়ে থাকেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। এই দিনে ঘরে ঘরে ভালো রান্নার আয়োজন করেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা। সর্বোপরি ধর্মীয় আচরণবিধি অনুসরণ করে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়।
এদিকে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার (২০ অক্টোবর) সারাদেশে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা হবে। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশন রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার এবং বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ রাজধানীর সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে চলছে নানা অনুষ্ঠান।
বিএনএনিউজ/আরকেসি