বিএনএ,ঢাকা: ফারজানা সিঁথি। আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দ্য হাংগার প্রজেক্ট, বাংলাদেশ’এর বরগুণা সদরের সাধারণ সম্পাদক। নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দেওয়া ফারজানা সিঁথি গত দেড় মাস ধরে ঢাকায় অবস্থান করে আসছে। দিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব । আন্দোলনের সময় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে ফারজানা সিথি দরাজ কণ্ঠে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করছেন, “আপনারা কি কোটার পুলিশ?”। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। গতি আসে আন্দোলনে।তার এমন সাহসিকতার জন্য অনেকে তাকে “কুইন”, “বাঘিনী” ,“আয়রন লেডি” উপাধি দিয়েছেন।
গত ১৬ আগষ্ট সকালে দলবলসহ শাহবাগ থানায় যান ফারজানা সিথি। থানায় আগে থেকে আটক কথিত এক ‘রেপিষ্ট’ কে রাস্তায় নিয়ে ১০জন মেয়েকে দিয়ে ১০ মিনিট পেটাতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া এ ফারজানা সিঁথি! এই খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন আশিকের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল থানায় উপস্থিত হন। এতে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন সিঁথি। সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন এবং বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমন কী ধমকও দেন। এমন পরিস্থিতিতে ক্যাপ্টেন আশিক অসীম ধৈয্যের পরিচয় দেন এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে সমর্থ হন। সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সিঁথির উগ্র আচরণের ভিডিও রীতিমত ট্রল ও মিম ম্যাটেরিয়ালে পরিণত হয়েছে। এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। পরবর্তীতে সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে অশোভন আচরণের জন্য এক ভিডিও বার্তায় ফারজানা সিঁথি ক্ষমা চান।
উসকানি ও অপমানের মুখেও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার জন্য প্রশংসা পেয়েছেন সেই সেনা কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন আশিক। এই জন্য সেনাবাহিনীর প্রধান তাকে সম্মানসূচক ‘সেনা গৌরব পদক’ প্রদান করেন।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন ও শাহবাগ থানায় কথিত ‘ধর্ষক’ ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাকে আঙ্গুল উচিয়ে হুমকি দেওয়া ফারজানা সিঁথি নিজেকে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী পরিচয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি নিজেকে সমন্বয়ক বলেও দাবি করেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক তালিকায় তার নাম নেই।
সিঁথির ফেসবুক প্রোফাইল পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল, বাড়ি ইত্যাদি হিডেন করে রাখা হয়েছে। তবে তার ব্যক্তিগত বেশ কিছু অশালীন ছবি ও ভিডিও এখনো রয়েছে। আরও আছে, ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ চলাকালে দৈনিক ইত্তেফাকে ছাপা বাসন্তির কথিত জাল পড়া ছবি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বব্যাপী বিরাজমান ক্ষুধা-দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্রত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ’দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট’ এর জন্ম। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা হিসেবে ’দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট’ ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করে। ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার ২২ টি দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে এনজিও ব্যুরোর রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তির মাধ্যমে ’দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট’-বাংলাদেশ, কাজ শুরু করে। বাংলাদেশে তাদের দেড় হাজারের বেশি স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠন রয়েছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দ্য হাংগার প্রজেক্ট, বাংলাদেশ’এর বরগুণা সদর শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা সিথি কীভাবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হলেন? কারা তাকে ঢাকায় এনেছেন? কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের ভুঁয়া পরিচয়ে শাহবাগে লাঠি হাতে সম্মুখ সারিতে অবস্থান করে নেতৃত্ব দিয়েছে? সেই রহস্য রয়েই গেল।
বিএনএ নিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী