বিএনএ লালমনিরহাট: উজানের ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তার পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার (২০ আগস্ট) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খুলে দেয়া হয়েছে ব্যারেজের সব গেট। উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির গতিবেগ দেখে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে নদীতীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুক্রবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে জেলার ৫টি আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে, উজানের ঢলের কারণে পানি ব্যারেজ পয়েন্টে উঠা-নামা করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, ব্যারেজের সব গেট খুলে দেয়া হলেও পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। তখন পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)।
এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়ই চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ও কাজীপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। তলিয়ে যাচ্ছে অনেক ফসলি জমি।আগামি কয়েকদিন পানি বৃদ্ধি পেলে বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
অন্যদিকে,পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১৫টি গ্রাম ও চিলমারী ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। ঘর-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানিসহ নানা সংকটে রয়েছে এসব এলাকার মানুষ। তলিয়ে গেছে এ অঞ্চলের আমন ধান, পাটক্ষেত ও মরিচক্ষেতসহ বিভিন্ন ধরনের কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল ।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার জানান, কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের দুই ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রাম এখন বন্যাকবলিত। এসব এলাকার মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা হচ্ছে। কোনো মানুষ যেন অনাহারে না থাকে সেজন্য দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আগামি ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী মথুরা ও আরিচা পয়েন্টে এবং পদ্মা নদী সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনএনিউজ/আরকেসি