33 C
আবহাওয়া
৩:৪০ অপরাহ্ণ - জুন ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আনোয়ারার ওসি সোহেলের খুঁটির জোর কোথায়?

আনোয়ারার ওসি সোহেলের খুঁটির জোর কোথায়?


বিএনএ, ঢাকা: প্রাচীন ভারতের মহাপণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ, কুটুনীতিক ও দার্শনিক চাণক্য বলেছিলেন, ‘মাছ কখন জল খায় আর রাজপুরুষ কখন ঘুষ খায় এটা বোঝা সহজ কাজ নয়’। এত প্রাচীন যুগে গিয়ে লাভ নেই। সংবাদের পরিসরে কুলোবে না। বরং আধুনিককালে আসি। ‘খাই খাই’ কবিতায় সুকুমার রায় বলেছেন, ‘সুদ খায় মহাজনে ঘুষ খায় দারোগায়’।

সুকুমার রায়ের খাই খাই কবিতার সুদ খোর মহাজনের সন্ধান পাওয়া না গেলেও সম্প্রতি আনোয়ারা থানায় ঘুষখোর এক দারোগার সন্ধান পাওয়া গেছে। যদিও ‘দারোগা’ এখন পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন ‘ওসি’। বলছিলাম, আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদের কথা।

YouTube player

ওসি হিসাবে সোহেল আহমেদ আনোয়ারা থানায় যোগদান করেন ২০২৩ সালের ২২শে জুন। যোগদানের পর গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেছিলেন তিনি দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করবেন। হবেন জনগণের সেবক, প্রতিষ্ঠা করবেন ন্যায় বিচার । মাদকের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করবেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে তার মুখোশ খসে পড়ে। কার্যক্ষেত্রে তার উল্টো চিত্রই দেখা যায়। আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদের ঘুষ নেওয়ার পদ্ধতি বেশ অভিনব। কেউ থানায় মামলা করতে এলে তিনি প্রথমে একটি খসড়া অভিযোগ দিতে বলেন। তদন্তের নামে সেই অভিযোগ নিয়ে একজন এসআই বা এএসআইকে ঘটনাস্থলে পাঠান এবং অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

অতপর থানায় পাল্টা অভিযোগ দেওয়ার পরার্মশ দেন। মিমাংসার নামে বৈঠকে ডাকেন। আসামী পক্ষ থেকে মোটা টাকা নিয়ে বাদিকে হুমকী ধমকী দিয়ে আপোষনামায় স্বাক্ষর নেন। কেউ ওসি সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করলে পাল্টা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। ঝিওরী গ্রামের মোহাম্মদ ইদ্রিস তার অন্যতম উদাহরণ। শুধু কী তাই ? সোহেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার একটি নিয়মিত মামলা রুজু করেন। এর ৪ ঘন্টা পর একই সময়, একই স্থানে একই অভিযোগে পদ্মা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের সিবিএ নেতা নাসির উদ্দিনের মালিকানাধীন শশী কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারকে বাদি দেখিয়ে পৃথক একটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হারুন চৌধুরীসহ বেশ কিছু নিরীহ লোককে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এই মামলাটি দায়ের করতে ওসি সোহেল আহমেদ সিবিএ নেতা নাসির উদ্দিন থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে ছিলেন। অথচ ঘটনার সময় হারুন চৌধুরী পদ্মা অয়েল কোম্পানির অফিসে কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে পদ্মা অয়েল কোম্পানির পতেঙ্গা গুপ্তখালস্থ অফিস থেকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু আদালতের কাছে তাকে কেইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে।

এখানে দু’টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হলেও প্রতিনিয়ত এই ধরনের নীতি নৈতিকতা বিরোধী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন ওসি সোহেল। তার ঘুষ কান্ড থেকে রক্ষা পায়নি মাদ্রাসায় দান করা কুরবানির পশুর চামড়াও।

গত ১৭ জুন রাত ১২ টার দিকে সাতকানিয়া দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য সংগৃহীত ১২৫টি চামড়া নিয়ে চট্টগ্রামের আতুরারডিপোস্থ আড়তে যাওয়ার সময় কালা বিবির দীঘি এলাকায় গাড়িটি আটকে রাখা হয়। দাবি করা হয় দুই লাখ টাকা। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ নানা অনুনয় , অনুরোধ করলেও গাড়ি ছাড়তে রাজি হননি ওসি সোহেল। স্থানীয় সংবাদকর্মীদের বিষয়টি জানায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। সংবাদকর্মীদের চাপে চামড়াবাহী গাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ওসি সোহেল আহমেদ। ততক্ষণে সব চামড়ায় পচন ধরেছে। এই অবস্থায় প্রতিপিস চামড়া মাত্র ৫০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাতকানিয়া দক্ষিণ চরতি মজিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। চামড়াবাহী গাড়ি আটকের কথা স্বীকার করলেও ঘুষ দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেন আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহমেদ।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আর বিভিন্ন মহল থেকে এ ঘটনার নিন্দার ঝড় ওঠে। অনেকে খোঁচা দিয়ে মন্তব্য করেছে ওসি সোহেল চামড়াও খায়!

প্রশ্ন উঠেছে, শত শত অপকর্মের হোতা ওসি সোহেল আহমেদের খুটির জোর কোথায়? জনশ্রুতি আছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে ওসি সোহেল। আনোয়ারায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সুনাম ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি একজন চৌকষ রাজনৈতিক নেতা। আনোয়ারা থানার ওসির নানা অপকর্মের কথা তারও অজানা নয়। জেনে শুনে সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ওসি সোহেল আহমেদের অপকর্মের দায় নিচ্ছে কেন?

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ