বিএনএ, বিশ্বডেস্ক: গাজা যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরায়েল। জাতিসংঘ সমর্থিত স্বাধীন কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ইচ্ছাকৃত ভারী অস্ত্রের ব্যবহার ও বেসামরিক জনগণের ওপর ইচ্ছাকৃত এবং সরাসরি আক্রমণ করা হয়েছে। খবর আল জাজিরা।
বুধবার (১৯ জুন) দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের চেয়ারপারসন নাভি পিল্লাই বলেন, ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জোরপূর্বক অনাহার, নির্মূল, হত্যা এবং ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করেছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় হামাসসহ অন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর যোদ্ধারাও যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে জানান নাভি পিল্লাই।
বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের অধিবেশনে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় সংঘটিত ঘটনা নিয়ে ওই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা হয়।
অধিবেশনে পর্ষদের চেয়ারপারসন নাভি পিল্লাই বলেন, ইসরায়েল জোর করে গাজার প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীকে ছোট আবদ্ধ এলাকায় ঠেলে দিয়েছে, যা অনিরাপদ এবং বসবাসের অযোগ্য। তিনি বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসক্ষমতার অস্ত্রের উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার দৃশ্যত বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর ইচ্ছাকৃত ও সরাসরি হামলাই ছিল।’
পিল্লাই আরো বলেন, কমিশন এ উপসংহারে পৌঁছেছে যে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার নির্দিষ্ট রূপগুলোও ইসরায়েলি বাহিনীর পরিচালনা পদ্ধতির অংশে দেখা গিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণের শুরু থেকেই ইসরায়েল দাবি করে আসছে, কেবলমাত্র হামাসকে নির্মূল করাই ইসরায়েলের উদ্দেশ্য। ইসরায়েলের এ দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে উল্লেখ করে পিল্লাই বলেন, যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন যে গাজায় তাদের অভিযানের উদ্দেশ্য হামাসকে ধ্বংস করা এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়া, তবুও হাজার হাজার মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এ উদ্দেশ্যগুলোর কোনোটিই মূলত অর্জিত হয়নি।
তিনি জানান, কমিশনের তদন্তে উঠে এসেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়কে অপমানিত এবং আরো অধস্তন করার উদ্দেশ্যে যৌন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা করেছে। ফিলিস্তিনি নারীরা অনলাইনে এবং ব্যক্তিগতভাবে যৌন সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। পাশাপাশি পুরুষরা যৌন এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাসহ অত্যাচার ও নির্দিষ্ট নিপীড়নমূলক আচরণের মধ্য দিয়ে গেছে।
এদিকে গাজায় আবারও শরণার্থীদের তাঁবুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। নিরাপদ ঘোষিত আল-মাওয়াসি এলাকায় চালানো এ হামলায় কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। রাতে যখন এ হামলা চালানো হয়, তখন এসব তাঁবুতে শিশুরা ঘুমিয়ে ছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার (১৯ জুন) জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭১ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৩৭ হাজার ৩৯৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন সাড়ে ৮৫ হাজারের বেশি।
বিএনএ/এমএফ/ হাসনা