বিএনএ, ঢাকা : আগে পার হতে হতো ফেরি দিয়ে। সময় লাগত অনেক বেশি। অপেক্ষায় থাকতে হতো কখন ফেরি আসে, কখন আবহাওয়া ঠিক থাকে বিষয়গুলোর ওপর্। আর ফেরিতে উঠার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাতো থাকতোই! ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এসব সমস্যা আর থাকছে না।
পদ্মার দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে ২১ জেলা। বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১৬টি, বাকিগুলো ঢাকার। এসব জেলায় যানবাহন ছুটে যাবে বাধা ছাড়াই। এসব রুটে দূরত্ব কমবে ১০০ কিলোমিটার বা তারও বেশি। যাতায়াতের সময় কমবে দুই ঘন্টারও বেশি।
বলা হচ্ছে, পদ্মা জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে এতদিন কখনও একঘণ্টা, আবার কখনও দেড় ঘণ্টা লেগেছে। সেতু চালু হয়ে গেলে জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যেতে বড়জোর ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। এছাড়া খুলনা যাওয়া যাবে ৩ ঘণ্টায়, আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই এক্সপ্রেসওয়ের সুফল আরও ভালোভাবে পাবে সাধারণ মানুষ।
এদিকে সেতু উদ্বোধনকে সামনে রেখে ৬০ পরিবহণ কোম্পানি প্রায় দেড় হাজার বাস সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
নতুন রুটে বেশি যাত্রী পরিবহণের আশায় একসঙ্গে শতাধিক বাস নির্মাণে হাত দিয়েছেন শরীয়তপুর জেলায় বাস মালিকরা। পর্যায়ক্রমে আরও বাস বাড়াতে চান তারা। ফরিদপুর-মাদারীপুর জেলার বাস মালিকরাও একইভাবে হাত দিয়েছেন নতুন বাস নির্মাণে। প্রস্তুতি নিতে পিছিয়ে নেই সারা দেশে চলাচলকারী পরিবহণ গ্রুপগুলোও। ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা নতুন রুটে বাস চালাতে গ্রিনলাইন পরিবহণ চালক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
এতদিন যেসব পরিবহণ মালিক গাবতলী থেকে ছেড়ে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে গন্তব্যে বাস পাঠাতেন তারা এবার আসছেন সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে।
ফেরি ব্যবস্থার কারণে রুটগুলোতে এতদিন বিলাসবহুল যান চালাতে পারেননি বাস মালিকরা। তাই এখন তারা পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন। পরিবহন মালিকরা ধারণা করছেন, পদ্মা সেতুর কারণে কুয়াকাটার পর্যটনে আরও সম্ভাবনা বাড়বে।
ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহণ (প্রা.) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমার কোম্পানিতে থাকা ৭০টি বাস মূলত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। সেতু উদ্বোধনের পর পদ্মা পাড়ি দিয়েই চলাচল করব আমরা। এতে সময় ও দূরত্ব দুটোই কমবে।’
পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা, বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ উপকারভোগী হবেন এই সেতুর। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ফরিদপুর জেলাগুলোর উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল লক্ষ্য।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।