বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে নেতারা যথাযথ মূল্যায়ন পচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি এই দুর্বলতা কাটিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সম্মেলন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ডিসেম্বরের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা দিয়ে হানিফ বলেন, আমরা আগামী ডিসেম্বরে জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করতে চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা মাঠে নেমেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এর মধ্যেই জেলায় প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করা। আর মহানগরে ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন আমরা করতে চাই আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই। এটা করলে আমাদের সাংগঠনিক অনেক নেতা যারা আছেন, যারা মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের মূল্যায়ন হবে এবং সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়বে।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে দুই দিনের সাংগঠনিক মত বিনিময় সভার প্রথম দিনে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের কিছুটা হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতা চোখে পড়েছে। টানা ১২ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আমাদের অনেকের মাঝে আয়েশি মনোভাব চলে এসেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন আছে, ততদিন ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতায় থেকে সংগঠন দুর্বল বা সবল বুঝা যাচ্ছে না। যার কারণে সংগঠনের দিকে সবার নজর একটু কম। যার ফলে অনেক জেলায় দেখেছি ১৫ ও ২০ বছর হয়ে গেছে, কমিটির কোনও পরিবর্তন নেই। সংগঠনের যে কার্যপদ্ধতি সেটাও কোন রকমে চলছে।
সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, প্রতি তিন বছর পর পর সম্মেলনের মাধ্যমে সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংগঠনকে শক্তিশালী করা। যারা কর্মঠ ও যোগ্য তাদের নেতৃত্বে নিয়ে আসা এবং দুর্বল বা কাজ করতে যাদের আগ্রহ নেই, তাদের ধীরে ধীরে পিছনের কাতারে নিয়ে যাওয়া।
মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, চট্টগ্রামে সংগঠনের একটা ঐতিহ্য আছে। এই চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতাসহ বহু বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে। আমাদের বীর সন্তান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, তিনি যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন চট্টগ্রামে, বেগম খালেদা জিয়ার পতনের জন্য অসহযোগের সময়, চট্টগ্রাম বন্দরে আন্দোলন করে সারাদেশ অচল করে দিয়েছিলেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন, আন্দোলন করে কিভাবে ন্যায্য দাবি আদায় করতে হয়। ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিউদ্দিন ভাই মেয়র প্রার্থী ছিলেন। বিএনপি ফল কারচুপির চেষ্টা করেছিল। তখন আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী সারারাত ধরে স্টেডিয়ামে পাহারা দিয়ে সেই কারচুপি ঠেকিয়েছিলেন। বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে এমন আন্দোলনের ইতিহাস তো আছে। চট্টগ্রামের আন্দোলন সারাদেশের নেতাকর্মীদের উজ্জীবীত করেছিল। সেই চট্টগ্রামে এখন যে সাংগঠনিক দুর্বলতা সেটা দুঃখজনক। আমরা চাই, তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক কোথায় কি দুর্বলতা আছে- সেটা দূর করে কিভাবে সম্মেলন করা যায়, কোন সমস্যা আছে, সেটা এখানে সমাধান করতে চাই। সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর জন্য সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করবেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।
প্রথম দিনের মতবিনিময় সভায় সকাল ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ দিদারুল আলম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এবং তাদের নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং আহ্বায়ক-যুগ্ম আহ্বায়কদের নিয়ে এই বৈঠক হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম-১০ আসনের সাংসদ আফছারুল আমীন ও তার নির্বাচনী এলাকার সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে অসুস্থ থাকায় সাংসদ বৈঠকে ছিলেন না। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও এই নির্বাচনী এলাকার সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
গত ১৭ জুন চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ২০ ও ২১ জুন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দুইদিন ব্যাপি কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, নগর আওয়ামী লীগ দলকে গতিশীল রেখেছে, ভয়কে জয় করেছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়াদোর্ত্তীণ তৃণমূল স্তরের কমিটিগুলো পুনর্গঠিত করে নগর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আমাদের মধ্যে প্রথম শর্ত দলকে সুসংগঠিত করা। বৈরিতা বা আত্মঘাতী সমালোচনা প্রতিপক্ষকে ইন্ধন দেবে।
বিএনএনিউজ/মনির