28 C
আবহাওয়া
১২:৫০ অপরাহ্ণ - জুন ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » আনোয়ারায় ত্রিমূখী লড়াই, ফ্যাক্টর ওসি!

আনোয়ারায় ত্রিমূখী লড়াই, ফ্যাক্টর ওসি!


বিএনএ ডেস্ক : :২০০৮ সালের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ১৬ বছর পর আনোয়ারাবাসী উপজেলা নির্বাচনে আরেকটি জমজমাট ও প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে যাচ্ছে। নির্বাচনী উত্তাপের সবটুকুই তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে ঘিরে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও আওয়ামী লীগের সর্মথনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই পরপর দুইবার আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তৌহিদুল হক চৌধুরী। তার প্রত্যাশা ছিল এবারও  সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সমর্থন পাবেন। কিন্তু  এবার গনেশ উল্টে গেছে।

YouTube player

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সার্সন রোডস্থ বাসভবনে গত পহেলা মে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বটতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মান্নান চৌধুরীকে প্রার্থী ঘোষণা করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

শুধু তাই নয়, ১২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মান্নান চৌধুরীকে বিজয়ী করার নির্দেশনা দেন। বসে নেই বর্তমান চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। তিনিও প্রার্থী হয়েছেন। ফলে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সমর্থিত প্রার্থী এম. এ মান্নান চৌধুরী হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় ভোটার ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। আর এর নেপথ্য কারণ  বর্তমান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। তিনি সমর্থন দিয়েছেন  আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হককে।

খুব অল্প সময়ে তিনি একটি শক্ত ভিত তৈরি করেছেন। এই অবস্থায় আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রীর প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাড়িয়েছে। নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ হতে পারে এমন পরিস্থিতিতে দুইজনই এলাকার বাহিরে অবস্থান করলেও প্রতিদিন নিজ নিজ অনুসারিদের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারাভিযান মনিটরিং করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) সংসদীয় এলাকার রাজনীতিতে একক অধিপতি ছিলেন সাবেক ভূমি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য  সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। কিন্তু সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য  আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান অর্থ প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর রাতারাতি রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়। আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হয়।  আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ ওয়াসিকা আয়শা খানকে সামনে রেখে আলাদা অবস্থান তৈরি করে। ধস নামে সাবেক ভূমি মন্ত্রীর রাজ্যে। এ দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ রাতারাতি ওয়াসিকার সঙ্গে ভিড়ে প্রকাশ্যে কর্মসূচি দিলে প্রভাব পড়ে স্থানীয় রাজনীতিতে।

গত দুই মাসে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় একের পর এক কর্মসূচি পালন করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা। তারই প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে।

এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে দুই মাস ধরে নির্বাচনী ধারাবাহিক প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী। শেষ মুহূর্তে সাবেক ভূমিমন্ত্রী তাকে সমর্থন দিলে তিনি  উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীর বিজয়ের পথে বড় বাধা হয়ে দাড়াবে। সাধারণ ভোটারদের বড় একটি অংশ তৌহিদুল হক চৌধুরীর পক্ষে রয়েছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে আনোয়ারায় তিন পক্ষ একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে আছে। সাবেক ভূমিমন্ত্রীর প্রার্থী এম এ মান্নানকে জেতাতে ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এককাট্টা হলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা মাঠে নেমেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হককে জেতাতে। ওই দুই প্রার্থীর বাহিরে জেলা-উপজেলার বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে মাঠে আছেন তৌহিদুল হক চৌধুরী।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের অনুসারী কাজী মোজাম্মেল হক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ায়, নির্বাচনে এক ধরনের উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। ঘুরে যাচ্ছে ভোটের হিসাব নিকাশ।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের উন্নয়ন ও কল্যাণে সারাজীবন লড়াই সংগ্রাম করেছেন। জনগণ এবার বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করবেন এমনটা বিশ্বাস করেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া এই নেতা।’

উপজেলা পরিষদের দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গত দশ বছর সুখে–দুঃখে জনগণের সঙ্গে ছিলাম, তাঁদের পাশে থেকেই উপজেলার উন্নয়ন করেছি। জনগণই আমার শক্তি। জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী গত দুই বারের এই চেয়ারম্যান।’

আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পারলে তিনিই বিজয়ী হবেন। কিন্তু একটি মহল তার জনপ্রিয়তা দেখে পেশি শক্তি ও প্রশাসনকে প্রভাবিত করে বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার নীল নকশা প্রনয়ন করছে। জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়ে সেই  ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে বলে জানান দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে বিতাড়িত এই নেতা।

উপজেলা  নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের চেয়ারম্যান পদে তৌহিদুল হক চৌধুরী (দোয়াত কলম) , অধ্যাপক এম.এ মান্নান চৌধুরী (মোটরসাইকেল)  , কাজী মোজাম্মেল হক (আনারস),  পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুগ্রীব মজুমদার দোলন( তালা) , এম. এ মান্নান মান্না( চশমা), সালাউদ্দিন সারো (টিউবওয়েল) , প্রদীপ দত্ত কনক( মাইক) , সন্তোষ কুমার দে( বই) , আবু জাফর চৌধুরী( টিয়াপাখি), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মরিয়ম বেগম (ফুটবল) , পারভীন আকতার( কলসি) এবং এড. চুমকি চৌধুরী( হাঁস) প্রতীকে প্রদ্বন্দ্বীতা করছেন।

এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের স্বাদই পাচ্ছেন আনোয়ারার মানুষ। বিএনপি বা বিরোধী দলের প্রার্থী নেই, দলীয় প্রতীকও নেই। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যে ১২ জন লড়ছেন প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। তারপরও ভোটের মাঠের এই জমজমাট চেহারা মূলত সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খানের দ্বৈরথের কারণে।

সাবেক ভূমিমন্ত্রীর পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ও অর্থপ্রতিমন্ত্রীর পিতা আতাউর রহমান খান কায়সার দুইজনই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। দুইজনই ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রয়াত এই নেতারা রাজনীতির মাঠে ছিলেন বিপরীত মূখী। উত্তারাধিকার সূত্রে তাদের সন্তানরাও রাজনীতির সেই ধারাকে লালন করে যাচ্ছেন।

ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই সহিংস হয়ে উঠছে নির্বাচন পরিস্থিতি। প্রচারে হামলা, ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, ভোটারদের কেন্দ্রে না যেতে হুমকিসহ নানা বিতর্কিত কাণ্ডে বারবার উঠে আসছে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মান্নান চৌধুরীর অনুসারীদের নাম। মান্নানের অনুসারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আনোয়ারা থানার ওসি সোহেল আহাম্মেদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে ইসিতে।  বির্তকিত ওসি সোহেল আহাম্মেদকে বহাল রেখে আনোয়ারায় শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে জানান নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি প্রার্থীরা।

শামীমা আরা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী 

Loading


শিরোনাম বিএনএ