ভাষা সৈনিক, সাংবাদিক, সমাজ সংগঠক সৈয়দ মোস্তফা জামাল ১৯৩৪সালের ৮জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া গ্রামের সৈয়দ বাড়িতে জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারাবরণকারী নেতা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রথম সাধারণ সম্পাদক মরহুম আলহাজ মৌলভী সৈয়দ সোলতান আহমদ। মাতার নাম মোসলেমা খাতুন( লোহাগাড়া উপজেলার সুখছড়ি মৌলভী পাড়ার বিখ্যাত আলেম আল্লামা আবদুর রহমানের কন্যা)।
ভাষা সৈনিক সৈয়দ মোস্তফা জামাল ১৯৪৫সালে সাতকানিয়া সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং পরে ঢাকা কলেজ থেকে বি,ত্র পাশ করেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের করাচি থেকে সাংবাদিকতার ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
১৯৪৮সালে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র রূপে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা। উক্ত পত্রিকার সহ সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন চলাকালে বর্তমান রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক ধর্মঘট পালনে নেতৃত্ব দেন। বৃহত্তর সাতকানিয়া(লোহাগাড়াসহ) থানার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের আহবায়ক হিসেবে সমগ্র চট্টগ্রাম শহর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতাকে নিয়ে সড়ক অবরোধ ও কলেজে কলেজে ধর্মঘট পালন করেন। সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে রাজধানীতে ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত সব সভা, সমাবেশ মিছিলে সৈয়দ মোস্তফা জামাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২সালে সদ্যকারামুক্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সঙ্গে ধানমন্ডির বাড়িতে সাক্ষাত করে ভাষা আন্দোলন নিয়ে মত বিনিময় করেন। ৫২ এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নিরলস ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরুপ সৈয়দ মোস্তফা জামালকে মীরপুর বাংলা কলেজের গভর্নিং বডির অন্যতম সদস্য নিযুক্ত করা হয়।
সৈয়দ মোস্তফা জামাল এর পিতা মরহুম আলহাজ মৌলভী সৈয়দ সোলতান আহমদও একজন ভাষা আন্দোলনের ত্যাগী সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তান প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি থাকার সুবাদে সারাদেশে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন তীব্র করা এবং শিক্ষকদের আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করতেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সভা সমাবেশে যোগ দিতেন।
ভাষা সৈনিক সৈয়দ মোস্তফা জামাল পিতার ন্যায় স্বাধীন পেশায় বিশ্বাস করতেন। ৬০দশকে দৈনিক আজাদী পত্রিকার রাজধানীর প্রথম ব্যুারো প্রধান নিযুক্ত হন। দীর্ঘ সময় পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতার স্নেহে কাজ করেছেন। ১৯৬০সাল থেকে তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন(ডিইউজে), বিএফইউজের সদস্য ছিলেন। অবিভক্ত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) যুগ্মসম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৪সালের ২২ এপ্রিল( ২ রবিউলআউয়াল) রাতে চট্টগ্রাম শহরের বাসায় ৬৯বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মহান আল্লাহতায়ালা তাঁকে ক্ষমা ও বেহেস্ত নসিব করুন। আমিন।
সূত্র: সৈয়দ মোস্তফা জামালের ডায়েরি, যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব, ভাষা আন্দোলনে চট্টগ্রাম,লেখক: এস জি নবী।
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল