24 C
আবহাওয়া
৭:০৭ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ২০, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » পতন কেন আচঁ করতে পারেনি হাসিনা?

পতন কেন আচঁ করতে পারেনি হাসিনা?


বিএনএ ডেস্ক : ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে! দেশের একটি প্রাচীন দল ও একজন পরাক্রমশালী শাসকের এমন পরিণতি কেন হলো?  কেনই বা বারবার ক্ষমতায় আসা দলটিকে বা সে দলের সব নেতাকে —একসঙ্গে পালিয়ে যেতে হলো?

 

এমন দিন আসবে তা কেউই হয়তো আঁচ করতে পারেনি?  রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্ররা আগামীতে এ বিষয়ে গবেষণা করবেন। এই নিয়ে বেরিয়ে আসবে আসল কারণ। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর অন্যতম হল: অতিরিক্ত দম্ভ, একগুয়েঁমি, অতিকথন, বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, জনগণের অধিকার রক্ষায় উদাসীনতা, আইনের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করা, সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারা, দেশের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া,নিজেদের মতো করে রাজনীতির গতিপথ তৈরির প্রচেষ্টা, বিএনপি ও জামায়াতকে একই সঙ্গে মাইনাস করার চেষ্টা , বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার কূট কৌশল, জাতীয় পার্টিকে সরকারের ‘বি টিম’ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি, ব্যাংক সেক্টরসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার হরিলুটের কারণে মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের বিনা ভোটে বারবার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া দলটির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির বদলে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাসহ তার পারিষদদের এককভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ইচ্ছা, দলকে বিপদে ফেলেছে। অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করা হলে আওয়ামী লীগ এভাবে সংকটে পড়তো না। নিজেদের মতো করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করার অব্যাহত প্রবণতা ছিল —দলটির জন্য বড় ভুল। এই ভুলের মাত্রা এতটা বিস্তৃত হয়েছিল যে, নির্বাচনে প্রার্থী না পাওয়ায়—নিজ দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিলেন যে, সবকিছুতে আমিত্বকে গুরুত্ব দিতেন। তার সেই সিক্রেটস বুঝতে পেরে দলের নেতারা ও সরকারের মন্ত্রীরা সবকিছুর সঙ্গে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে জুড়ে দিতেন।এই তোষামোদের মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, অনেক সত্য তথ্যও শেখ হাসিনা পেতেন না বা অর্ধেক সত্য, অর্ধেক মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হতো তার কাছে।

দল ও সরকারে হাইব্রিড বা আগন্তকরা শেখ হাসিনার এই আমিত্বের পূজা করে তাকে খুশি রাখার পাশাপাশি নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও স্বজনদের, স্তুতিতে ভাসিয়ে দিয়ে তাদের ক্ষতি করেছেন।

বিশেষ করে দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের তোষামোদকারী-সুযোগসন্ধানীদের ‘ইয়েস স্যার’ প্রক্রিয়া, শেখ হাসিনাকে সত্য ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ করে দিয়েছে। ফলে একদিকে হাইব্রিডদের লাগামছাড়া ঠাঁই হয়েছে, অন্যদিকে প্রকৃত ত্যাগী ও মূল্যবোধসম্পন্ন নেতারা কোণঠাসা হয়েছেন।

পর্যবেক্ষকমহলের মতে, বারবার নিজের মতো করে ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অনেক বেশি দাম্ভিক হয়ে উঠেছিলেন।   প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিকে পরাস্ত করার নেশায় পেয়ে বসেছিল তাকে। বিএনপি ও জামায়াতকে একইসঙ্গে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন। হেফাজতে ইসলাম ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কখনো সন্ধি, কখনো ফন্দি করেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী প্রগতিশীল দলগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। যা রাজনৈতিক শূন্যতার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। আর এই শূন্যতা শেখ হাসিনাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

বিশেষ করে অসামরিক-সামরিক আমলাচক্র এবং প্রশাসনিক চক্র শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করেছে বেশি। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে শেখ হাসিনা জনগণ ও দলের ত্যাগী নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

শেখ হাসিনার পতনের জন্য কতিপয় সাংবাদিকও কম দায়ী নয়।। তাকে ঘিরে একটি তোষামোদ সাংবাদিক গ্রুপ তৈরি হয়।অনেক গুণী ও প্রভাবশালী সাংবাদিক কোণঠাসা ছিলেন, তোষামোদকারী সাংবাদিকদের কারণে। ‘ইয়েস আপা’ মার্কা ওই সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরার বদলে শেখ হাসিনা খুশি হবেন, এমন তথ্য দিতেন। তারা আওয়ামী লীগের স্তুতিবাক্যে ভরে উঠতো। ফলে প্রকৃত তথ্য পেতেন না শেখ হাসিনা।

ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার এই প্রবণতা চালু রাখতে গিয়ে, অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা,— সাধারণ জনগণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

গুঞ্জন আছে, ৫ই আগস্টের ঘটনাবলীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই সুযোগসন্ধানীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দলটি প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও রাজনৈতিকভাবে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে পারেনি। শুধুমাত্র আর্থিক লাভালাভের প্রতি নেতাদের অতি লিপ্সার কারণে। ।

যুদ্ধাপরাধ ও মৌলবাদী রাজনীতির ধারক অভিযোগে যে জামায়াত-শিবিরকে, কোণঠাসা করার পাশাপাশি নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই গোষ্ঠীর প্রচুর নেতাকর্মীকে আবার আওয়ামী লীগে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে দলের বিভিন্ন সারির নেতা ও সরকারের মন্ত্রীরা, তাদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন বলে, অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সুযোগ বুঝে তারা বিদ্রোহ করে ।

সর্বোপরি ড. ইউনূসকে হেয় করা, তাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো-বাইডেন স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের অপ্রত্যাশিত পতন হয়।

সৈয়দ সাকিব

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ