বিএনএ, বিশ্বডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডেমোক্র্যাট দলের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জো বাইডেন। শপথ পাঠের সময় নিজ পরিবারের ১২৭ বছরের পুরনো বাইবেলে হাত রাখেন নেতা বাইডেন। শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ।
জো বাইডেন শপথ নেন এই বলে, “আমি একনিষ্ঠভাবে শপথ গ্রহণ করছি যে, আমি বিশ্বস্ততার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব, এবং আমি আমার সামর্থের সবটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিপালন করবো”।
এর আগে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমালা হ্যারিস। হ্যারিসের শপথের আগে আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা।
মিনেসোটা সেনেটর অ্যামি ক্লোবাকার অভিষেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন।
শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বারাক ওবামা। সঙ্গে যোগ দেন তাদের স্ত্রী মিশেল ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন।
প্রতিবার লাখ লাখ মানুষ অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপন করতে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হন। করোনা ভাইরাস ও নিরাপত্তার কারণে এবার সাধারণ মানুষ অনুষ্ঠানে আসতে পারছেন না। যা মার্কিনীরা তাদের ইতিহাসে কখনো দেখেনি।
ক্যাপিটল হিলে প্রবেশের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার স্ত্রী জিলের হাত ধরে ছিলেন। অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে ওয়াশিংটন ডিসির একটি গির্জায় অনুষ্ঠিত প্রার্থনা সভায় সস্ত্রীক যোগ দেন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস নেতা সেনেটর মিচ ম্যাককনেল এবং প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
শপথ অনুষ্ঠানের পরিবেশ অনেকটা শান্ত ও গম্ভীর। মাত্র দু’সপ্তাহ আগে সেখানে ট্রাম্প সমর্থকরা দাঙ্গা করেছে। ক্যাপিটল হিলের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর চালিয়েছে যাতে পাঁচজন নিহত হয়।
এবারের শপথ অনুষ্ঠান আরেকটি দিক দিয়েও ব্যতিক্রম। এর আগে প্রতিটি শপথ অনুষ্ঠানেই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকতেন। তবে সেই রাজনৈতিক রীতি ভেঙে এবারের শপথে ছিলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি আগেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মাত্র তিনজন প্রেসিডেন্ট তাদের উত্তরাধিকারীর অভিষেকে উপস্থিত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন – জন অ্যাডামস, জন কুইন্সি এবং অ্যান্ড্রু জনসন। গত শতাব্দীতে অবশ্য একজন প্রেসিডেন্টও এই কাজ করেননি।
এদিকে শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনে ব্যাপক নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে শহরে। সঙ্গে কয়েক হাজার স্থানীয় পুলিশ এবং আরও বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা। ক্যাপিটল হিল, পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউয়ের একটা বড় অংশ এবং হোয়াইট হাউস যেন দুর্গই। জায়গায় জায়গায় বসছে আট ফুট উঁচু লোহার ব্যারিকেড। এরই মধ্যে সোমবার অনুষ্ঠানের মহড়া চলাকালীন ক্যাপিটলের অদূরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে আগুন লেগে যায়। চূড়ান্ত সতর্কতা হিসেবে সাময়িক ভাবে লকডাউন করে দেয়া হয় ক্যাপিটল ভবন ও তার আশপাশের এলাকা। ঘটনার সময়ে তাঁবুতে কেউ ছিলেন না অবশ্য। পুলিশ জানিয়েছে, অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক নেই। খুব দ্রুত আগুন নিভিয়েও ফেলা হয়। তবে শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যে শুধু ওয়াশিংটন ডিসি-তেই চার হাজার অফিসার মোতায়েন করেছে ইউএস মার্শাল।
প্রত্যেক বার ক্যাপিটল হিল লাগোয়া যে ন্যাশনাল মল থেকে হাজার হাজার মানুষ শপথ-অনুষ্ঠান দেখতেন, সেটিও বন্ধ নিরাপত্তার কারণেই।
বিএনএনিউজ/ এইচ.এম।