31 C
আবহাওয়া
৩:১৯ পূর্বাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » নির্বাচন ও সংস্কারে কেন বিএনপি ‘দোদুল্যমান’

নির্বাচন ও সংস্কারে কেন বিএনপি ‘দোদুল্যমান’


বিএনএ ডেস্ক : বাংলাদেশে এই মূহুর্তে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এক ধরনের দোদুল্যমানতা রয়েছে। তাদের সাম্প্রতিক সময়ে নেতাদের বক্তব্যে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।

সর্বশেষ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যে তা স্পষ্ট।

১৬ই সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অবিলম্বে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যাদের দায়িত্ব দিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে বলা হচ্ছে, নতুন দল তৈরি করতে হবে। নতুন দল তৈরি করার কথা বললে জনগণ কীভাবে বুঝবে তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছেন?

‘কেউ যদি মনে করেন একটি উন্নত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ, শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না,’ বলেন তারেক রহমান। নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান দৃশ্যত বিপরীতমুখী।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের দিক থেকে কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করা হয় কী না সেদিকেও দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। এ বিষয়টিও নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো চিন্তা নেই তাদের। তবে বিষয়টি নিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে তারেক রহমানের বক্তব্যের ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে।

মির্জা ফখরুলের কড়া হুশিয়ারির একদিন পর ১৭ই সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের বক্তব্যে, নির্বাচন নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো কিংবা ‘অবিলম্বে নির্বাচনের’ কোনো দাবি তিনি তোলেননি।

গণতন্ত্র দিবসের জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান বলেছেন, এই সরকারের ব্যর্থতা হবে গণতন্ত্রকামী জনগণের ব্যর্থতা। ‘একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তে জনগণের অশিংদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এটি প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে। সুতরাং এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, একদিকে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনের চাহিদা, অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংস্কারের চাহিদা–এ দুটো বিষয় মাথায় রেখে বিএনপি ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছেন। ফলে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্যে ‘দোদুল্যমানতা’ দেখা যাচ্ছে।

এই বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, নির্বাচন নিয়ে তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সারমর্ম অভিন্ন। ‘দুটো বক্তব্যের মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই, হয়তো প্রাসঙ্গিকতার কারণে তা ভিন্ন মনে হচ্ছে,’ ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের সঙ্গে নানা বিষয় জড়িত আছে, তাই এই মুহূর্তে নির্বাচনের জন্য বিএনপি যে খুব বেশি সিরিয়াস সেটি বলা যাবে না। দলটির নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক আছে। তারা মনে করে একটা নির্বাচন হলে তাদের দল ক্ষমতায় যাবার সুযোগ আছে। তাছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও বিচার বিভাগের সংস্কার প্রয়োজন এবং সংবিধান সংস্কারের কাজ নির্বাচিত সরকারের হাতেই থাকতে হবে।

প্রসঙ্গত, কয়েক সপ্তাহ আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান বলেন, ‘এখনও শত শত মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। রক্তের দাগ মোছেনি। বন্যায় দেশ আক্রান্ত। এই সময়ে কেউ নির্বাচন নির্বাচন জিকির তুললে জাতি তা গ্রহণ করবে না।’

 

জামায়াত নেতার এই বক্তব্য ভালভাবে নেয়নি বিএনপি। পরে এর জবাবে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যাদের জনসমর্থন নেই, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। যাদের ভোটে জয়ের সামর্থ্য নেই, তারাই নির্বাচনের বিরুদ্ধে।’

 

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এসব কমিশন এখনো গঠিত হয়নি। তবে, এসব প্রক্রিয়া ছয়মাসের মধ্যে শেষ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা । সেক্ষেত্রে নির্বাচনের জন্য খুব বেশি সময় লাগার কথা নয় বলেও তারা মনে করেন। বিএনপি নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা ‘সর্বোচ্চ সহযোগিতা’ করবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়টি জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকেই তৈরি হয়েছে । সংস্কারের জন্য কোন সুযোগ না দিয়ে সরাসরি নির্বাচনের দাবি তুলে ধরলে বিএনপির প্রতি জনগণের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ এইচ.এম/এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ