26 C
আবহাওয়া
৫:৩৫ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৭, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৮ (সুনামগঞ্জ-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৮ (সুনামগঞ্জ-৫)


বিএনএ, ঢাকা:  বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের হালচাল।

সুনামগঞ্জ-৫ আসন

সুনামগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনটি দোয়ারাবাজার এবং ছাতক উপজেলার নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২২৮ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আবদুল মজিদ বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ১ শত ৮৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৪১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আবদুল মজিদ বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২২ হাজার ২ শত ৬৬ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সতন্ত্র প্রার্থী এম ইয়াহিয়া। তিনি পান ২০ হাজার ৫ শত ১৮ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কলিম উদ্দিন কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচন বিএনপির কলিম উদ্দিনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৯ হাজার ৭ শত ৯০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭ শত ৮২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪২ হাজার ৭ শত ২০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির এম ইয়াহিয়া। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ১ শত ২০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪ শত ৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮ হাজার ২ শত ৩২ জন। নির্বাচনে বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৩ হাজার ৬ শত ৬০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৫ শত ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ১ শত ৪৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৫১ হাজার ২ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬২ হাজার ১ শত ৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৭৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ১ শত ৬০ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১লাখ ৬৪ হাজার ৪ শত ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনএফ এর আশরাফ হোসেন । টেলিভিশন প্রতীকে তিনি পান ৩ হাজার ২ শত ৬৪ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ১১ হাজার ৮ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯ শত ৫৮ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মিজানুর রহমান চৌধুরী, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির নাজমুর হুদা , হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হুসাইন আল হারুন ,টেলিভিশন প্রতীকে ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ আশরাফ হোসেন, কুড়েঘর প্রতীকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ আবদুল ওদুদ, উদীয়মান সূর্য প্রতীকে গণফোরাম এর আইয়ুব করম আলী , দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে খেলাফত মজলিস এর মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২১ হাজার ৩ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মিজানুর রহমান চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৮৯ হাজার ৬ শত ৪২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশিরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সুনামগঞ্জ-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৯.৫৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৪.৩৮%, বিএনপি ৭.৬৯%,জাতীয় পার্টি ১৮.১০%জামায়াত ইসলামী ১০.৫৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪৯.২৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৭.২৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৯১%, বিএনপি ২২.৯২%জাতীয় পার্টি ২৭.৮২% জামায়াত ইসলামী ৬.৮১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৩.৫৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৯.৭৮ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪০.১০%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৫৮%, জাতীয় পার্টি ৪.৫৭ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৭৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৬.৮৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৫.০৮%, ৪ দলীয় জোট ৩৩.৪৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৪৬% ভোট পায়।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এছাড়া আরও মনোনয়ন চাইতে পারেন আওয়ামীলীগের নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম জামায়াত ইসলামী থেকে জোটের মনোনয়ন চাইবেন সিলেট মহানগর কর্মপরিষদের সদস্য গোবিন্দগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সালাম আল-মাদানী।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাচঞ্চলের সীমান্ত ঘেষা জনপদ সুনামগঞ্জ- ৫ আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। স্বাধীনতার পর এ আসনে আওয়ামী লীগ পাঁচ বার , বিএনপি দুইবার, জাতীয় পার্টি তিনবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার বিজয়ী হয়। সিমেন্ট শিল্পের জন্য বিখ্যাত এই আসনের বিশাল জনগোষ্ঠি শ্রমজীবী। তারা যেদিক ঝুঁকে, জয় সেদিকে হয়। জয়-পরাজয়ের আরেক ফ্যাক্টর জামায়াত ইসলামী। ধর্মভিত্তিক এই দলটির নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। যা বিএনপির বাক্সে যাবে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বেশ ভাল। তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর ভোট রয়েছে। বিএনপি চায় আসনটি পুনরুদ্ধার। আওয়ামী লীগ চায় ধরে রাখতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের মধ্যে দ্বন্দ্ব- বিভক্তি রয়েছে। বিভক্তির ধারা গ্রাম পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। যা নির্বাচনে বড়ো ধরনের প্রভাব পড়বে। যদিও আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছে। এটিই আওয়ামী লীগের শেষ ভরসা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২২৮ তম সংসদীয় আসন (সুনামগঞ্জ-৫) আসনটিতে আওয়ামী লীগকে বিএনপির সঙ্গে জিততে হলে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

আরো পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৭ (সুনামগঞ্জ-৪)

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, এমএফ,ওয়াইএইচ /এইচ এ মুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ