29 C
আবহাওয়া
৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ - জুন ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৭ (সুনামগঞ্জ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৭ (সুনামগঞ্জ-৪)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৭ (সুনামগঞ্জ-৪)

বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম।

YouTube player

সুনামগঞ্জ – ৪ আসন

আজ থাকছে সুনামগঞ্জ – ৪ আসনের হালচাল। সুনামগঞ্জ- ৪ সংসদীয় আসনটি সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২২৭ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আবদুল জহুর মিয়া বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭ শত ৫৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৯২ হাজার ৫ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল জহুর মিয়া বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৬ শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শামসুল আবেদীন । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৫ হাজার ৮ শত ৬৫ ভোট ।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬ শত ৬৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯ হাজার ১ শত ৮৬ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ১ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আবদুল জহুর মিয়া । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ৩ শত ৬০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ২ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮ শত ৩১ জন। নির্বাচনে বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ৮ শত ৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের দেওয়ান শামসুল আবেদীন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৮ শত ৬৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির বেগম মমতাজ ইকবাল বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৭ শত ১৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬ শত ৩৯ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বেগম মমতাজ ইকবাল বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২২ হাজার ৬ শত ৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ৪ শত ১৭ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৩ হাজার ৯ শত ৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের তানভীর আহমদ তাছলীম, রিক্সা প্রতীকে খেলাফত মজলিসের মোহাম্মদ আজিজুল হক, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আম প্রতীকে ন্যশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মোহাম্মদ দিলোয়ার এবং হারিকেন প্রতীকে মুসলীম লীগের আল হেলাল মোঃ ইকবাল মাহমুদ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বিজয়ী হন । লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৭ হাজার ২ শত ৮৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ফজলুল হক আসফিয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৭ শত ৪৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম সংসদে আওয়ামী লীগ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম সংসদে বিএনপি , নবম, দশম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর সুনামগঞ্জ – ৪ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ – ৪ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৬.২০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৩.১০%, বিএনপি ২৭.৯৪%, জাতীয় পাটি ২৭.৬০%, জামায়াত ইসলামী ৫.৪৩% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫.৯৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.০৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৪৭%, বিএনপি ৩৩.১১% জাতীয় পাটি ২৮.৫৮%, জামায়াত ইসলামী ৬.৩৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.০৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.০৬%, ৪ দলীয় জোট ৪২.৯৭%, জাতীয় পাটি ২০.৯৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৮৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬২.৫২%, ৪ দলীয় জোট ২৯.৭১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৭৭% ভোট পায়।

সুনামগঞ্জ – ৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ। মহাজোটের শরিক হিসাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জোটের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম । জামায়াত ইসলামী থেকে এই আসনে জোটের মনোনয়ন চাইতে পারেন সুনামগঞ্জ জেলার সিনিয়র জেলা নায়েবে আমীর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামছ উদ্দিন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেখার হাওর, খরচার হাওর এবং আঙ্গারুলি হাওরসহ সুরমা ও চলতি নদী বেষ্টিত সুনামগঞ্জ-৪ আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি- তিন দলই বিভিন্ন সময় বিজয়ের স্বাদ পেয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে এই আসনটিতে তিনবার আওয়ামী লীগ, তিনবার বিএনপি, পাচবার জাতীয় পার্টির প্রাথীরা নির্বাচিত হন। এখানে কোনও দলের একক ভোট ব্যাংক না থাকলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ত্রিমূখী অবস্থান রয়েছে। বর্তমানে আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এর দখল নিতে চায়। কিন্তু উভয় দলে রয়েছে কোন্দল ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২২৭তম সংসদীয় আসন (সুনামগঞ্জ – ৪) আসনটির জয় পরাজয় নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক সমীকরণের ওপর।

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, ওজি,ওয়াইএইচ  

আরও দেখুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২২৬ (সুনামগঞ্জ-৩)

Loading


শিরোনাম বিএনএ