বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: এক শিক্ষার্থীকে চুক্তি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করা দেওয়া এবং চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা না দেওয়ায় অপহরণ করার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সাত-আটজনের নামে মামলা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষীতে শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শাহ মখদুম হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়।
শুক্রবার (১৮ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হলের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তন্ময়। তিনি বলেন, ‘এক নারী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা পৃথক দুটি মামলা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই অভিযোগ কেউ প্রমাণ করতে পারলে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ফাঁসির মঞ্চ সাজিয়ে নিজের ফাঁসি নিজেই কার্যকর করব।’
তিনি অভিযোগ করেন, ইতিপূর্বে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আমার অন্যান্য প্রতিদ্বন্বীরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘যেকোনো মূল্যে তন্ময়ের উইকেট ফেলাতে হবে অ্যাট অ্যানি কস্ট’। তারা আমাকে পদবঞ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। রাজুর (অন্যতম আসামি) সাথে ফোনে কখনো আমার কোনো কন্টাক্ট হয়নি। যে ব্যক্তির সাথে আমার ফোনেই কথা হয় না, তার সাথে কিভাবে আমার যুক্ত হওয়া সম্ভব। (গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী) রাজু আমার কথায় পরিচালিত হবে, এটা টোটালি ইম্পসিবল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মোছা. রেহেনা বেগম এবং রাজশাহীর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়েরকৃত এজাহার সম্পূর্ণভাবে ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদীত। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে একটি অপহরণ এবং প্রক্সি জালিয়াতির ঘটনা জানতে পারি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ঘটনাটি (অপহরণ) শেরেবাংলা হলে ঘটে। এরসাথে জড়িতরা হলেন- রাজু আহমেদ, মহিবুল মমিন সনেট, প্রাঙ্গন এবং আরও কয়েকজন।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে শুক্রবার সকালে জানতে পারি যে, উক্ত ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে দুইটি মামলা করা হয়েছে। আমাকে একটি মামলায় এক নম্বর এবং আরেকটি মামলায় তিন নম্বর আসামি করে এজাহারভুক্ত করে মতিহার থানায় মামলার আবেদন করা হয় এবং এই খবরটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটা আমার জন্য সম্পূর্ণভাবে অনাকাঙ্খিত। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারণে এরআগেও আমার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা চালানো হয় এবং সবগুলোই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এটা প্রমাণিত হয় যে, আমি বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার।
সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত রাজু আহমেদ সভাপতি গোলাম কিবরিয়ার অনুসারী। আর গেলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদকের রুনুর সাথে আমার রাজনৈতিকভাবে ডিরেক্ট ক্লাস। আমি যেহেতু ছাত্রলীগ করি, সেহেতু ব্যক্তিটাকে সম্মান না করলেও তার পদকে আমি সম্মান করি। এজন্য সংগঠনের ভিতরের অনেক কথা আমি বলতে চাচ্ছিনা। কারণ বললে, আমার ছাত্রলীগের সুনামটাই বেশি ক্ষুণ্ন হবে। এঘটনার বিষয়ে আমার সম্পর্কে কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা।
বারবার আপনার বিরুদ্ধেই কেন প্রক্সিকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেহেতু অন্য কোনো অভিযোগ নাই, তাই তারা এই অভিযোগটা বারবার আনে। এখন আমাকেতো তাদের আটকাতে হবে। আমি হার্ড ক্যান্ডিডেট নাহলে, আমার বিরুদ্ধে কিন্তু কখনো কোনো অভিযোগ আসবেনা। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত বছরেও জালিয়াতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়।
প্রক্সির সাথে জড়িত না থাকলে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকার লেনদেন কি কারণে হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা খোজ নিয়ে দেখবেন যে, আমার অ্যাকাউন্টের অধিকাংশ টাকা আমার পরিবার থেকে ঢুকতো। আর আমিতো সরকারকে ট্যাক্স দেই। নিজে ধান, চাল আর পাটের ব্যবসা করি।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের মধ্যেও কিন্তু একটা প্যানেল তৈরি হয়ে গেছে। এখন অনেক শিক্ষকও তাদের ‘মাই ম্যান’ ক্যান্ডিডেটকে ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে দায়িত্বে দেখতে চায়। তারা ভাবে, তাদের পছন্দের মানুষ ক্ষমতায় আসলে তারা নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ভালো একটা ফ্যাসিলিটিজ পাবে। এতে অনেক টাকা-পয়সা তারা ইনকাম করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, রাবির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রক্সি (বদলি) পরীক্ষা দেওয়ানোর মাধ্যমে চান্স পেয়ে ভর্তি হতে এসে জালিয়াতির কথা স্বীকার করায় আটক হন আহসান হাবীব নামে এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষার্থীসহ তার স্বীকারোক্তী অনুযায়ী পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইদিন আহসান হাবীবের মা মোছা. রেহেনা বেগমও চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত দুই-তিনজনের নামে মামলা করেছেন।
দুই মামলার আসামীরা হলেন- জালিয়াতি করে ভর্তি হওয়া মো. আহসান হাবীব, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রাজ্ঞন, রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, মো. সাকিব, ও অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ