বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম বন্দরে টাগবোট (সাহায্যকারী জলযান) না পেয়েই ২৩ কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান।
১৯ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ট্যাগবোট না পেয়েই ২৩ কোটি টাকার বিল পরিশোধ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টাগবোট কিনতে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেছিল একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে টাগবোটটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও তা সরবরাহ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। এমন পরিস্থিতিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা পালন না করে উল্টো টাগবোটের দেখা না পেলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ চার ধাপে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৩ কোটি ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৩ টাকা বিল দিয়ে দেয়।
তবে অনিয়মের এখানেই শেষ নয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ টাগবোট কিনতে যে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তার জন্য ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাস হয়। সেখানেও সংস্থাটি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ঠিকাদারের সঙ্গে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে। একটি জলযান কিনতে পদে পদে অনিয়মের এমন চিত্র উঠে এসেছে খোদ সরকারি একটি দায়িত্বশীল সংস্থার প্রতিবেদনে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বিধি ভেঙে এমন কার্মকাণ্ডের ফলে চুক্তির সাধারণ শর্তাবলি (জিসিসি) ও পিসিসির ১৮.১ ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে। ফলে সরকারের ২৩ কোটি ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৩ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ওই অর্থ আদায় করা আবশ্যক।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ (চবক) একটি প্রকল্পের আওতায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাগবোট (৩২০০ বিএইচপি) কেনার জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিউ ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে জলযানটি চবককে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। নির্ধারিত সময়ে সরবরাহ করতে না পারায় ওই মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বর্ধিত ওই মেয়াদের মধ্যেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টাগবোট সরবরাহ করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে চবককে নির্দেশনা দেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে উল্টো কয়েক দফায় বিল দেওয়া হয়েছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে।
টাগবোট কেনায় অনিয়মের বিষয়ে সরকারি সংস্থাটির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয় প্রকল্পের ডিপিপি, দরপত্র মূল্যায়ন, বিল-ভাউচার ও অন্যান্য নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, টাগবোট কেনার জন্য চট্টগ্রামের বন্দর এলাকার ১৪৪০/এ-বি, আমিন ফিউচার পার্কের ঠিকানায় থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটিকে চার দফায় ২৩ কোটি ৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ১৫ কোটি ১০ লাখ টাকা, ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ১ কোটি ৯৬ লাখ ৩৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং সর্বশেষ গত বছর ৭ সেপ্টেম্বর ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়। এছাড়া প্রকল্পে টাগবোটটি কেনার জন্য ডিপিপিতে মূল্য ধরা ছিল ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু চুক্তি করা হয়েছে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকায়। অথচ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর চুক্তি বাতিল, পারফরম্যান্স সিকিউরিটি বাজেয়াপ্ত করা এবং ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টরা তা না করে ঠিকাদারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাড় করে দিয়েছে। ফলে এর দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এ অর্থ আদায় করা আবশ্যক।
বিএনএনিউজ/আমিন