24 C
আবহাওয়া
১০:১২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » তারেক ‘শুদ্ধি ঝড়’ বিপর্যস্ত অনেক নেতা!

তারেক ‘শুদ্ধি ঝড়’ বিপর্যস্ত অনেক নেতা!

তারেক ‘শুদ্ধি ঝড়’ বিপর্যস্ত অনেক নেতা!

বিএনএ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল, যুব সংগঠন যুবদলের নেতাকর্মীরা যখন ঈদুল আযহা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন দলে হঠাৎ তারেক জিয়া কথিত ‘শুদ্ধি ঝড়’ বয়ে গেছে। ঢাকাসহ চার মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটিতেও বড় রদবদল করেছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক জিয়া। রদ বদল করা হয়েছে ছাত্রদল ও যুবদলে। একই প্রক্রিয়ায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক স্তরে পরিবর্তন করা হবে এমন গুঞ্জন রয়েছে। ফলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও আতংক ভর করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক ক্ষমতাবলে এই রদবদল করেন। এ বিষয়ে কিছুদিন ধরে এ তৎপরতা আঁচ করা গেলেও নীতিনির্ধারণী নেতারা জানতেন না। এতে অনেকে বিরক্ত।

YouTube player

সম্মেলন ছাড়া দলে হঠাৎ এভাবে কমিটি ভাঙাগড়ায় নেতাদের অনেকে হতাশ। এমন রদ বদল নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারেক জিয়ার শুদ্ধি ঝড়ের লাগাম টানতে দলের চেয়ারপাসন বেগম জিয়ার হস্তক্ষেপ কামনা করেছে দলের মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে ঢালাওভাবে বিএনপিতে রদ বদলের বিষয়টি উপস্থাপন করেছে। যদিও এ বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে কেউ মুখ খুলেনি।

দলটির নেতারা এই ওলট–পালটে কার্যত বিএনপির পরবর্তী কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রাক্‌–প্রস্তুতির ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। তাঁদের ধারণা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে আরও রদবদলের পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি ‘পরিকল্পিত’ সম্মেলন অনুষ্ঠানের দিকে যেতে পারেন। কারণ, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন রক্ষায় সম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ আট বছর আগে ২০১৬ সালের মার্চে বিএনপির জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল। যদিও দলের গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর সম্মেলন করার বিধান রয়েছে। এখন সম্মেলন না করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটিতে এই রদবদল আনা হলো।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে মধ্যরাতে বিএনপির ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। একই সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকার চার আঞ্চলিক কমিটি এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিএনপি ও যুবদলে এই ওলট–পালটের মধ্যে ১৫ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ২৬০ সদস্যের আংশিক পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসে।

সবচেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ৪৪টি পদে রদবদল এবং ২৯ সদস্যের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে। নির্বাহী কমিটিতে ৩৩ পদে নেতাদের কাউকে কাউকে নতুন যুক্ত করা হয়েছে, আবার কারও কারও পদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এই রদবদলে উপদেষ্টা পরিষদে ১১ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জহির উদ্দিন স্বপন ও মেজর জেনারেল (অব.) মো. শরীফ উদ্দীন।

এই রদবদল নিয়ে সদ্য নিযুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, জনগণের সমর্থন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য ও গণতান্ত্রিক বিশ্বের নৈতিক সমর্থন কাজে লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে দল পুনর্গঠনে হাত দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এই রদবদলে যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়েছে মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, হারুন অর রশীদ ও বর্তমানে কারাগারে থাকা আসলাম চৌধুরীকে। এ ছাড়া রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সাখাওয়াত হাসান, বেবী নাজনীন ও খালেদ হোসেন চৌধুরীকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। আবার দুই সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ ও আবদুস সালাম আজাদকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে আসাদুজ্জামান রিপনকে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ কয়েকজন নেতাকে যুগ্ম মহাসচিবের পদ থেকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে পদায়ন করা হয়েছে। তাঁদের ওপর তারেক রহমান সন্তুষ্ট ছিলেন না। বিভিন্ন কারণে কিছু নেতার ওপর মনঃক্ষুণ্ন। এ কারণে তাঁদের সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একজন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।

সদ্য সাবেক এই যুগ্ম মহাসচিব তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘ভালো-খারাপ কিছুই বলব না। যত দিন বেঁচে আছি, বিএনপির কর্মী হিসেবে কাজ করে যাব।’

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি দলের নেতা-কর্মীদের সমালোচনার মুখে পড়ে। তাঁদের দাবি, কমিটি যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে বোঝাপড়া বা সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি। তাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় শক্তিধর দেশগুলোর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যায়নি। এখন আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি পুনর্গঠন করা হলো। তারেক রহমান এই কমিটির প্রধান হলেও কার্যত দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে কমিটি কাজ করবে বলে জানা গেছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আগের কমিটির প্রধান ছিলেন।

নতুন এই কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন নজরুল ইসলাম খান (স্থায়ী কমিটির সদস্য), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (স্থায়ী কমিটির সদস্য), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান), আবদুল আউয়াল মিন্টু (ভাইস চেয়ারম্যান), নিতাই রায় চৌধুরী (ভাইস চেয়ারম্যান), ইসমাইল জবিউল্লাহ (চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য), হুমায়ুন কবির (আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক), সিরাজুল ইসলাম (সাবেক রাষ্ট্রদূত) ও তাজভিরুল ইসলাম (কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সভাপতি)।

রদবদলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সহায়ক কমিটিও করা হয়েছে। এতে রয়েছেন শামা ওবায়েদ, অনিন্দ্য ইসলাম, নাসির উদ্দিন অসীম, নওশাদ জমির, কায়সার কামাল, আসাদুজ্জামান, আফরোজা খান, ফাহিমা নাসরিন, জিবা খান, নিপুণ রায় চৌধুরী, শেখ রবিউল আলম, মীর হেলাল উদ্দিন, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমীন, ইসরাফিল খসরু, আবু সালেহ মো. সায়েম (ইউকে) ও ইকবাল হোসেন (বেলজিয়াম)।

আবদুল আউয়াল মিন্টু এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, দলকে শিগগিরই আন্দোলনমুখী করার পরিকল্পনা সামনে রেখে এই পুনর্গঠন করা হচ্ছে।’

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন তারেক রহমানের একক ক্ষমতায় দলের ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে এমন ‘কাগুজে’ পরিবর্তন সরকারবিরোধী আন্দোলন কতটা বেগবেন হবে তা নিয়ে খোদ কেন্দ্রীয় নেতাদের সংশয় সন্দেহ রয়েছে।

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ