বিএনএ, টেকনাফ: কক্সবাজারের টেকনাফে ভারী বর্ষণে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে কমপক্ষে আট হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা।
জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টেকনাফের প্লাবিত ৫০ গ্রামের মধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৮টি, হ্নীলা ইউনিয়নের ১২টি, পৌরসভার ৭টি, সদর ইউনিয়নের ৬টি, সাবরাং ইউনিয়নের ৭টি, বাহারছড়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কমপক্ষে ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার পর থেকে কক্সবাজার জেলায় ভারী থেকে মাঝারি মানের বৃষ্টিপাত শুরু হয়। আজ বুধবারও সেই বৃষ্টি হচ্ছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের উপসহকারী পরিচালক তোফায়েল আহমদ জানান, গতকাল বেলা ১২টা থেকে আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। তবে টেকনাফ আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত টেকনাফে ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, তার ইউনিয়নের ১২ গ্রামের ৪ হাজার বেশি পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এসব গ্রাম হলো জালিয়াপাড়া, সাইটপাড়া, ফুলের ডেইল, আলী আকবর পাড়া, রঙ্গিখালী লামার পাড়া, আলীখালি, চৌধুরী পাড়া, পূর্ব পানখালী, মৌলভীবাজার লামার পাড়া, ওয়াব্রাং, সুলিশপাড়া ও পূর্ব সিকদার পাড়া। এসব গ্রামের চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার কলেজপাড়া, শীলবুনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়া প্লাবিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি জানান, এই ৭ গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দী। পানিতে ডুবে আছে টেকনাফ কলেজসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু ঘরবাড়িসহ চলাচলের রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় মাছের ঘেরসহ লবণের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, সদরের ৬ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এগুলো হলো মহেশখালীয়াপাড়া, তুলাতুলি, লেঙ্গুরবিল, খোনকারপাড়া, মাঠপাড়া ও রাজারছড়া।
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি জানান, লম্বা বিল, উলুবনিয়া, আমতলি, মিনাবাজার, উনচিপ্রাং, কাঞ্চনপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া ও রইক্ষ্যং গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে সাড়ে তিন শতাধিক পরিবার সবচেয়ে বেশি প্লাবিত রয়েছে। এর মধ্যে উনচিপ্রাং এলাকার একটি রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় বসতবাড়িতে এক ফুট পানি উঠেছে।
বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, তার ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের কম বেশি পানিন্দী। এতে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে ১০ গ্রাম। এতে ১ হাজার পরিবার খুব খারাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণে ফলে কিছু গ্রামে মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। আমরা তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি অতিভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। এ জন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বিএনএ/এমএফ