বিএনএ,চট্টগ্রাম: আষাঢ়ের শুরুতে কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে থেমে থেমে চলছে বৃষ্টি। কখনো হালকা, কখনো বা মাঝারি। সেই সাথে বইছে বাতাসও। এর মধ্যেই চট্টগ্রামসহ কয়েকটি বিভাগে ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শনিবার (১৯ জুন) বিকেল তিনটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে প্রায় ১২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) বিকেল থেকে লাগাতার হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে বন্দরনগরীর নিম্নাঞ্চল। নিচু এলাকাগুলোতে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে গেছে। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্লাবিত হওয়ায় অনেক জায়গায় যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বৃষ্টিতে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জরুরি কাজে বাড়ির বাহিরে বের হওয়া মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মুরাদপুর, সুন্নিয়া মাদ্রাসা এলাকা, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহরের কয়েকটি স্থানে বর্ষায় জলাবদ্ধতা নিত্য সঙ্গী। এসব এলাকায় হাঁটু পরিমাণ পানি জমে গেছে। এতে করে ঘর থেকে বের হওয়া নগরবাসীকে কষ্ট করে চলাচল করতে হচ্ছে।
শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অধীনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এটি শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ জুলাই মাসে। ওই প্রকল্পের অধীনে নগরীর বিভিন্ন খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যা বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এসব বাঁধ সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। তবে সোমবারের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে বলেও আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রধান আবহাওয়া কার্যালয়ের পূর্বাভাস কর্মকর্তা ও আবহাওয়াবিদ সেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাসের সাথে মাঝারী থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দক্ষিণ/ দক্ষিণ–পশ্চিম দিক হতে ঘণ্টায় ১০-১৫ কি.মি. বেগে যা দমকা হাওয়ার আকারে ৪৫-৬০ কি.মি.পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
তিনি বলেন, শনিবার থেকে রোববার (২০ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভবনা রয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রামের পাহাড় ধসের অশঙ্কাও রেয়েছে।
এদিকে ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে সকাল থেকেই কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সকাল থেকেই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে আসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ে মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের নিরাপদে চলে আসার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামে ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
চট্টগ্রামের জঙ্গল সলিমপুর, বায়েজিদ, মতিঝর্ণাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বিপুল পরিমাণ মানুষ বসবাস করে। যার বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ।
১৪ জুন অভিযান চালিয়ে বায়েজিদ লিংক রোডের আশেপাশের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ৩৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। এরপর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে আর অভিযান পরিচলনা করা হয়নি।
টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে গতকাল (শুক্রবার) থেকে বড় জাহাজ থেকে পণ্যের খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরের ভেতরে কন্টেইনার ওঠা-নামানোর কাজ পুরোদমে চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এরমধ্যেও বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ডেও কোন পানি ওঠে নি। তবে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয় এমন পণ্য যেমন শিশু খাদ্যপণ্য, সিমেন্ট, চিনি বোঝাইকৃত জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। এসব পণ্য লাইটার জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা হয়। কিন্তু ভারী বর্ষণের কারণে এসব পণ্য খালাস করলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আপাতত বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
বিএনএনিউজ/মনির