28 C
আবহাওয়া
২:৪৬ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শুক্রবারে(জুমার দিন) দরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত(২০২৩)

শুক্রবারে(জুমার দিন) দরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত(২০২৩)

ছবি বায়তুল মোকারম

বিএনএ, রিপোর্ট:  নবী করিম (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়লে বা তার কাছে সালাম পাঠালে মুসলমানদেরই লাভ। একবার সালাম পাঠানোর বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা ১০টি করে নেকি দেবেন। তবে শুক্রবারে জুমার দিনে দরুদ পাঠে আরও বেশি ও তাৎপর্যবহ সওয়াব ও ফজিলত রয়েছে।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহতাআলার প্রিয় হাবিব রাসুল (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়তে স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এবং আমার ফেরেস্তারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরুদ পাঠ পূর্বক সালাম প্রেরণ করিয়া থাকি; হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁহার ওপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৬)

পবিত্র জুমার দিন  (শুক্রবার) আমাদের যে সব করণীয় রয়েছে তারমধ্যে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি অধিক পরিমানে দুরুদ পাঠ করার কারণ বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত হাদীসটিতে:

সপ্তাহের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন

আউস বিন আউস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

তোমাদের দিন সমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে, এই দিনে সিংগায় ফুঁ দেয়া হবে এবং মহা বিপর্যয়ও (কিয়ামত) ঘটবে এই দিনেই। তাই এই দিনে তোমরা বেশি বেশি আমার উপর দরুদ পাঠ করবে; কেননা তোমাদের দরুদ আমার উপর পেশ করা হয় জুমার দিনে। শুক্রবারে(জুমার দিনের) দরুদ শরীফ পড়ার ফজিলত(২০২৩)অনেক বেশি।

আল্লাহর সৃষ্ঠির সেবা
আত্মীয়তা রক্ষা করার ব্যাপারে হাদিস

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার ওপর জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ এ হলো এমন মোবারক দিন; যে দিনে ফেরেশতারা উপস্থিত হয়। যখন কোনো ব্যক্তি আমার ওপর দরুদ পাঠ করে ওই দরুদ সে পড়ার আগেই আমার কাছে আনীত হয়। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার ইন্তেকালের পরও কি আপনার কাছে আনীত হবে? রাসুল (সা.) বলেন, ইন্তেকালের পরও। আল্লাহতায়ালা জমিনের জন্য সব নবীর দেহ হারাম করে দিয়েছেন।’ (তারগিব : ৩/৩০৩)

জুমার দিনের দরুদ শরীফ

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়। যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পাঠাবে, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন সবচেয়ে আমার নিকটতম হবে।’ (তারগিব, হাদিস : ১৫৭) দরুদ শরীফ।

জুমার দিনে যে দোয়া পড়লে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমার ওপর দরুদ পাঠ করা পুলসিরাত পার হওয়ার সময় আলো হবে। যে ব্যক্তি জুমার দিন ৮০ বার দরুদ পড়ে তার ৮০ বছরের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।’

জুমার দিনের আসরের পরের আমল

অন্য বর্ণনায় নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিইয়্যিল উম্মিইয়ি ওয়া আলা আলিহি ওয়া আস হাবিহি ওয়াসাল্লিমু তাসলিমা’। তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায় এবং ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়।’ (আফদালুস সালাওয়াত : ২৬)

হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নবী করিম (সা.)-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পাঠ করে, সে কেয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল!’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ১৭৪)

দরুদ শরীফ পড়ার নিয়ম

দরুদপাঠ হচ্ছে নবীর উপর সালাম পেশ করা। দুরুদ ফারসী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছেঃ আল্লাহ তাআ’লার কাছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য রহমত, বরকত ও শান্তির জন্য দোয়া করা।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কোরআনে এসেছে ‘অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ প্রেরণ করেন। হে মুমিনরা! তোমরাও তাঁর প্রতি যথাযথ দরুদ ও সালাম পেশ করো’ (সূরা : আহজাব, আয়াত : ৫৬)।

দুরুদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

দুরুদে ইব্রাহীম

সর্বোত্তম দুরুদ হচ্ছে দুরুদে ইব্রাহীম,যা আমরা সবাই সালাতে পাঠ করে থাকি। আপনি দুরুদে ইব্রাহীম পড়ে যে সওয়াব ও ফযীলত পাবেন, অন্য কোন দুরুদ পড়ে তার সমান সওয়াব ও ফযীলত পাবেন না।

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আ-লি মুহা’ম্মাদ, কামা সল্লাইতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম। ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করুন, যেমন আপনি ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি বরকত দান করুন, যেমন আপনি ইব্রাহিম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি বরকত দান করেছিলেন, নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান। সূত্র: সহীহ বুখারীঃ ৩৩৭০, সহীহ মুসলিম।

 দুরুদে ইব্রাহীম ২ (দরুদ শরীফ )

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আ-লি মুহা’ম্মাদ, ওয়া বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা সল্লাইতা ওয়া বারাকতা আ’লা ইবরাহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ।

বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ করুন এবং বরকত দান করুন, যেমনিভাবে আপনি ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি শান্তি ও বরকত দান করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও মহান।

ছোট দরুদ শরীফ

বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সল্লি আ’লা মুহা’ম্মাদিওঁ-ওয়া আ’লা আলি মু’হাম্মাদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহা’ম্মদ এবং তাঁর পরিবার-পরিজনদের উপর রহমত বর্ষণ কর।

উৎসঃ সুনানে নাসায়ীঃ হাদীস নং-১২২৫, হাদীসটি সহীহ।

اবাংলা উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।

সবচাইতে ছোট যেই দুরুদ পড়া যায়ঃ (তবে নামাজে নয়)

ছোট দরুদ শরীফ বাংলা

উচ্চারণঃ সল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম।

অর্থঃ আল্লাহ তাঁর (মুহা’ম্মদের) প্রতি সালাত (দয়া) ও সালাম (শান্তি) বর্ষণ করুন।

দুরুদ শরীফ কখন পড়তে হয়?

নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান হবে।”

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ”নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা এমন বান্দাকে ভালবাসেন যে মুত্তাক্বী,(মানুষদের থেকে) অমুখাপেক্ষী, লুকিয়ে ইবাদতকারী।”

সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা মুমিনের কর্তব্য:

সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা মুমিন নর নারীর কর্তব্য।তেমনি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনের জন্য আল্লাহর সহায়তা প্রার্থনা করা অতীব প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকটে এ দুয়া করতেন, ” হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়াত, তাক্বওয়া, নৈতিক পবিত্রতা এবং সচ্ছলতা বা অন্যের অমুখাপেক্ষিতা প্রার্থনা করছি।”

মহান আল্লাহতাআলা প্রত্যেক মুসলমান নরনারীকে জুমার দিন( শুক্রবার) নবী করিম (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠের তওফিক দান করুন। আমিন।

বিএনএনিউজ২৪,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ