বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার দুই মামলায় আবারও ৪ দিনের রিমান্ডে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী। বুধবার (১৯ মে) দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের ভার্চুয়াল আদালত দুই মামলায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক (প্রসিকিউশন) হুমায়ুন কবির। তিনি জানান, সম্প্রতি হাটহাজারী থানার দায়ের হওয়া দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পৃথকভাবে ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন আদালতে। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে এক মামলায় ২ দিন করে ২ মামলায় ৪ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে ১৩ মে চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়ন্তী রাণীর আদালতে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে এক নারীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জাকারিয়া নোমান ফয়জী। জবানবন্দিতে নোমান ফয়েজী বলেন, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে এক নারীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারী নিয়ে আসেন। সেখানে একটি ভাড়া বাসায় তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতেন। পরে ওই নারী যখন বুঝতে পারেন তাকে বিয়ে করবেন না, তখন তিনি চট্টগ্রাম শহরে চলে যান। সেখানেও ফয়েজী গিয়ে আবার বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণ করেন।
জবানবন্দিতে আরও বলেন, ওই নারী ছাড়াও আরও কয়েকজন নারীর সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে, যাদের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে চ্যাট করতেন।
জানা যায়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে জাকারিয়া নোমান ফয়জীর বিরুদ্ধে গত ৬ মে হাটহাজারী থানায় ধর্ষণের মামলা করেন এক নারী। মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৯(১) দায়ের করা হয়েছে। এসআই মো. মুকিব হাসান মামলাটি তদন্ত করছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফেসবুকের মাধ্যমে ওই নারীর সঙ্গে জাকারিয়া নোমান ফয়েজীর পরিচয় হয়। মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যা টিংয়ের মাধ্যমে তিনি ওই নারীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে হাটহাজারীতে আসতে বলেন। পরে ওই নারী হাটহাজারী আসেন। তাকে ২০১৯ সালের নভেম্বরে ফয়েজী বাসা ভাড়া করে দেন। এক বছর ধরে ভাড়া বাসায় অবস্থানকালে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তাকে ধর্ষণ করেন ফয়েজী।
গত ৫ মে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে জাকারিয়া নোমান ফয়জীকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাকে হাটহাজারী থানার সহিংসতার মামলায় রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গত ১১ মে চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার কৌশিক আহমেদের আদালতে হাটহাজারীতে সহিংসতার ঘটনায় করা মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জাকারিয়া নোমান ফয়জীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মেখল গ্রামে। তিনি হাটহাজারী উপজেলার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া হামিয়ুচ্ছুন্নাহ মেখল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক। তার বাবা নোমান ফয়জী হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন। গত ২২ মার্চ তিনি মারা যান।
প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন গত ২৬ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় ভাংচুর, স্থানীয় ভূমি অফিসে অগ্নিসংযোগসহ রক্তক্ষয়ী সংঘাতে লিপ্ত হয় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে হেফাজতে ইসলামের চার কর্মী নিহত হন। এর জেরে তিনদিন ধরে হাটহাজারী থানার অদূরে হেফাজতের মূল ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মইনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সামনে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ইটের দেওয়াল তুলে অবরোধ তৈরি করে রাখে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। একই ঘটনার জেরে চট্টগ্রামের পটিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় প্রথমে সাতটি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় কারো নাম উল্লেখ না করে কয়েক হাজার অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এরপর গত ২২ এপ্রিল আরও তিনটি মামলা দায়ের করা হয়, যার মধ্যে দু’টিতে প্রধান আসামি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীকে। অপর মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলালসহ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
বিএনএনিউজ/মনির