বিএনএ, দিনাজপুর : অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন না করায় দিনাজপুরের ৩১৬টি চালকল ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করেছে খাদ্য বিভাগ। দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি অফিস আদেশে বিষয়টি জানানো হয়েছে। বাতিল করা চালকলের মধ্যে ২৯৬টি সেদ্ধ ও ২০টি আতপ চালকল রয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে- লাইসেন্স বাতিলকৃত মিলগুলো ধান থেকে চাল উৎপাদন কার্যক্রম, চাল বাজারজাতকরণ ও মিলে ধান-চাল মজুদ করতে পারবে না। ওই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে ধান-চাল সরকারি খাতে বাজেয়াপ্ত করাসহ সংশ্লিষ্ট চালকল মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লাইসেন্স বাতিলকৃত সিদ্ধ চালকলের মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৪০টি চালকল, বোচাগঞ্জে ৬০টি, বিরলে ৪টি, কাহারোল উপজেলায় ১৫টি, বীরগঞ্জে ১১টি, খানসামা উপজেলায় ৪টি, চিরিরবন্দরে ৩৩টি, পার্বতীপুরে ১৬টি, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৪০টি, বিরামপুর উপজেলায় ৭টি, হাকিমপুর উপজেলায় ২টি, নবাবগঞ্জ উপজেলায় ২৮টি চালকল, ঘোড়াঘাট উপজেলায় ৩৭টি চালকল রয়েছে।
আর যে ২০টি আতপ চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তার মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলার ১৯টি এবং চিরিরবন্দর উপজেলার একটি চালকল রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে সরকারের খাদ্য সংগ্রহ অভিযানে এই জেলায় সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২ হাজার ৮৭২ মেট্রিক টন আর আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন। এ ছাড়া ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। সরকারের এই অভিযানে ধান-চাল সরবরাহের জন্য জেলার ৯১১টি সিদ্ধ চালকল এবং ৮৩টি আতপ চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০২৪ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই সংগ্রহ অভিযান চলে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এই সময়ের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ মিল থেকে ৪৮ হাজার ৭২৪ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল, ১১ হাজার ৩০৬ দশমিক ৪৬ মেট্রিক টন আপত চাল ও ২ হাজার ২৫৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ সেদ্ধ চাল, ৯৬ শতাংশ আতপ চাল ও ১৩ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগ অভ্যন্তরীণ আমন ২০২৪-২৫ মৌসুমে চুক্তিযোগ্য ছিল কিন্তু চুক্তি সম্পাদন করেনি এমন চালকলের খাদ্য বিভাগীয় লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশনা প্রদান করে। সেই নির্দেশনা মোতাবেক জেলার ৩১৬টি চালকলের মিল এবং খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী লাইসেন্স বাতিল করে খাদ্য বিভাগ।
বাংলাদেশ মেজর ও অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন জানান, মৌসুম শুরু থেকেই বাজারে ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যখন সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে তখন বাজার যাচাই না করেই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে অনেক মিল মালিকই সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি। আবার যখন বাজারে ধান থাকে তখন কৃষকরা যে দামে ধান বিক্রি করে কিছুদিন পরেই সেই দাম বৃদ্ধি পায়। অবৈধ মজুতদাররা কৃষকদের ধান ক্রয় করে এবং পরে সিন্ডিকেট করে ধানের দাম বৃদ্ধি করে। এসব মজুতদারদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে ধান কিংবা চালের দাম বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব না। এ জন্য বাজার মনিটরিং বা ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হবে। মিল মালিকদেরকে দায়ী করলে হবে না, বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য ঠিক রেখে যদি সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয় তাহলে সব মিলারই সরকারকে চাল দেবে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, যেসব মিল চুক্তি করেনি এবং চুক্তি করেও যারা চাল দেবে না তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য নীতিমালা রয়েছে সেই নীতিমালা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল এবং এবং নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংগ্রহ কার্যক্রম বারিত রাখার শাস্তির বিধান রয়েছে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।